সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের হামলায় মিজানুর রহমান রিয়াদ নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার (মধ্যরাত) ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০-১২ জন শিবির কর্মী তার রুমে হামলা চালায় এবং লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। বর্তমানে তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত রিয়াদ ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১০১ নম্বর কক্ষের বৈধ আবাসিক ছাত্র। হামলার সময় তার রুমমেট বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জুনেদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় রিয়াদ ফেসবুকে মন্তব্য করেন—
“কীসের জন্য এত ত্যাগ করলাম? দিনের বেলা পুলিশের টিয়ারশেল আর লাটিচার্জ। রাতে পালিয়ে থাকলাম। সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের স্বপ্নে এত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি গুপ্ত সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন, তাহলে এই ত্যাগের মূল্য কী?”
এই মন্তব্য ছাত্রশিবিরের নজরে আসার পর প্রতিশোধ নিতে তার ওপর নির্মম হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।
রাতের খাবার শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় রিয়াদের রুমের দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ হয়। দরজা খুলে দিতেই ছাত্রশিবিরের কর্মীরা রুমে ঢুকে তাকে লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। এরপর প্রশ্ন করা হয়, "কুয়েটের ঘটনায় তুই শিবিরকে নিয়ে কী লিখেছিস?" কোনো উত্তর না দিয়েই তাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারা হয়।
পাশের রুম থেকে নাজমুল ও সালমান লোহার রড নিয়ে এসে রিয়াদকে পেটানো শুরু করে। তার রুমমেট জুনেদ বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। এরপর দরজা বন্ধ করে রিয়াদকে বেধরক পেটানো হয়।
অভিযোগ উঠে একপর্যায়ে শিবির কর্মী আদনান বলে, ‘তুই পরে যে অপবাদ দিবি, আগেই সেটি করে নেই।’ এই বলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিয়াদের পায়ের রগ কাটার চেষ্টা করে।
রুমের বাইরে থাকা জুনেদের চিৎকারে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা ছুটে আসেন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেলে হামলাকারীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রিয়াদকে টেনে এনে বাইরে ফেলে দেয় এবং তাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়।
তখন শিবির সেক্রেটারি মুন্না বলে, ‘সেও আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, পুলিশে দেওয়ার দরকার নেই। মার যা হওয়ার হইছে যথেষ্ট। আর যাতে ছাত্রাবাসে উঠতে না পারে।’
হামলাকারীরা ছাত্রাবাস ত্যাগের সময় ১০১ নম্বর রুমে তালা লাগিয়ে রিয়াদ ও জুনেদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিয়াদের মাথা, পিঠ ও ডান পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরাণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, ঘটনাটি এখনো আমার নজরে আসেনি। কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে এখন বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এফপি/এমআই