| শিরোনাম: |

সংগৃহীত ছবি
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদীতীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১৩ লোহার দানবাক্স খোলা হয়েছে। দীর্ঘ ৩ মাস ২৭ দিনের নীরবতা ভেঙে ১০টি দানবাক্স ও ৩টি ট্রাংক থেকে বেরিয়ে এলো ৩৫ বস্তা টাকা।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে খোলা হয় দানবাক্সগুলো। এরপর বস্তায় করে নিয়ে যাওয়া হয়। মসজিদের দ্বিতীয় তলায় ঢেলে দেওয়া হয় বিশ্বাসের এই অঢেল ফসল।
এদিন সকাল ৯টায় শুরু হয় গণনার আয়োজন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে সারাদিন ধরে চলতে থাকে হিসাবের ব্যস্ততা। সন্ধ্যার আলোয় মিলবে টাকার চূড়ান্ত হিসাব।
এই দানের পাহাড় গুনতে নেমেছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। ৩৫০ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৩৩ জন শিক্ষক ও স্টাফ, ২০ জন সেনা সদস্য, ৩০ জন পুলিশ সদস্য, ১০ জন আনসার ব্যাটালিয়ন, ৫ জন আনসার সদস্য, ১০০ জন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একসঙ্গে বসেছেন-সংখ্যা নয়, যেন মানুষের বিশ্বাসের ওজন মাপতে।
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকা আসে ঠিকই, তবে তার সঙ্গে আসে স্বর্ণালংকার, রুপা আর বিদেশি মুদ্রাও। কিন্তু সবচেয়ে ভারি যা-তা কাগজের কয়েক টুকরো চিঠি। এসব চিঠিতে লেখা থাকে মানুষের জীবনের অসমাপ্ত গল্প। কেউ লিখে যান বেদনার কথা, কেউ চাকরির অপেক্ষায় দিন গোনেন, কেউ ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার আকুতি জানান, আবার কেউ পরীক্ষার ফল, রোগমুক্তি কিংবা জীবনের একটু স্বস্তির জন্য প্রার্থনা করেন। এই দানবাক্স যেন হয়ে ওঠে মানুষের কান্না আর আশার নিঃশব্দ ঠিকানা।
এর আগে, গত ৩০ আগস্ট যখন দানবাক্স খোলা হয়েছিল, তখন ১৩টি সিন্দুক থেকে মিলেছিল রেকর্ড ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাগলা মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে প্রায় ১০৩ কোটি টাকা। সংখ্যাগুলো বড় হলেও, বিশ্বাসের পরিমাপ তার চেয়েও বড়।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাগলা মসজিদ এখন অনলাইনেও পৌঁছে গেছে মানুষের হাতে। গত ৪ জুলাই চালু হয়েছে পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের অফিসিয়াল অনলাইন ডোনেশন ওয়েবসাইট। উদ্দেশ্য একটাই দেশ-বিদেশে থাকা সেই মানুষগুলোর হাতে দানের সুযোগ পৌঁছে দেওয়া, যারা ইচ্ছা থাকলেও মসজিদে আসতে পারেন না। পাশাপাশি ঠেকানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গজিয়ে ওঠা প্রতারকচক্র।
পাগলা মসজিদ আজ আর শুধু একটি উপাসনালয় নয়। এটি হয়ে উঠেছে মানুষের বিশ্বাসের বাতিঘর। যেখানে মানুষ অন্ধকারে ফেলে যায় তার কষ্ট, আর আলো খোঁজে সৃষ্টিকর্তার কাছে। দানবাক্স খুললেই সেই বিশ্বাস ঝরে পড়ে টাকার বস্তা আর আবেগভরা চিঠিতে। এবারও পুরো দেশ তাকিয়ে আছে-গণনার শেষে ঠিক কতটা উঁচু হয় বিশ্বাসের এই পাহাড়।
পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রথমে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হলেও বর্তমানে এটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির ওপর বিস্তৃত। তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে রয়েছে একটি সুউচ্চ মিনার, যা পাঁচতলা ভবনের সমান উচ্চতা বিশিষ্ট এবং দূর থেকেও দৃশ্যমান। এখানে একসঙ্গে ৬ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এবং নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক নামাজের জায়গা।
এফপি/অ