| শিরোনাম: |

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি জীবদ্দশায় বিভিন্ন লেখালেখিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন—মৃত্যুর পর যেন তাকে বাবা আব্দুল হাদির কবরের পাশেই দাফন করা হয়। তবে তাঁর পরিবার জানিয়েছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নেবে, তারা সেটিই সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নেবে।
কিন্তু সরকারের ইচ্ছে অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত ঢাকায় কবি নজরুল ইসলামের কবরের পাসেই ওসমান বিন হাদিকে দাফন করা হবে বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানাগেছে। ওসমান বিন হাদির গ্রামে থাকা ছোট বোন মাসুমা আক্তার ও আমির হোসেন শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ২টার দিকে ঢাকার উদ্দ্যেশে নলছিটি ত্যাগ করেন। তবে ওসমান বিন হাদিকে ঢাকায় দাফন করা হবে সে বিষয়ে গোপন রাখা হয়েছিলো। সন্ধ্যার পরই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ঝালকাঠি তথা নলছিটিবাসী অশন্তোষ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন তাদের সন্তানকে নলছিটিতে দাফন করা হলে তারা চোখের সামনেই থাকবেন।
শুক্রবার সকালে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকায় হাদির গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তাঁর ভগ্নিপতি আমির হোসেন। তিনি বলেন, “হাদি এখন আর শুধু আমাদের পরিবারের নয়; তিনি রাষ্ট্রের সম্পদ। রাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটিই গ্রহণ করব। আমাদের একটাই চাওয়া—হাদির স্মৃতি যেন মুছে না যায়, দেশের প্রতি তাঁর আত্মত্যাগের গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ুক।”
আমির হোসেন নলছিটির ফুলহরি আব্দুল আজিজ দাখিল মাদরাসার সুপার ও বাইপাস সড়কের আশরাফ আলী হাওলাদার জামে মসজিদের ইমাম। তিনি হাদির বড় বোনের স্বামী। তিনি জানান, হাদির পৈতৃক বাড়ি নলছিটি উপজেলার হাড়িখালী গ্রামে। সেখানেই তাঁর বাবা আব্দুল হাদি সমাহিত আছেন। প্রায় চার দশক আগে খাসমহল এলাকায় বাড়ি করা হয়, যেখানে হাদির এক বোন বসবাস করতেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে ঝালকাঠির নলছিটি। রাত থেকেই খাসমহল এলাকায় তাঁর বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন, অনুসারী, সহযোদ্ধা, বন্ধু ও পাড়াপ্রতিবেশীরা। কান্না, বিস্ময় আর অবিশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
এলাকার মানুষ কোনোভাবেই হাদির আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে যাঁকে তাঁরা দেখেছেন, যাঁর কণ্ঠে শুনেছেন আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আর ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আহ্বান—সেই হাদির এমন পরিণতি অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য।
বাড়িতে আসা মানুষের চোখে ছিল অশ্রু, কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ। স্মৃতিচারণে উঠে আসে তাঁর দৃঢ় মনোবল, সাদাসিধে জীবনযাপন এবং অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস না করার দৃশ্যপট। পরিবার ও স্বজনদের দাবি একটাই—হাদিকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
হাদির অনুসারীরাও জানান, তাঁর শুরু করা লড়াই কোনো মৃত্যুতেই থেমে যাবে না। ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তাঁরা রাজপথে সোচ্চার থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এদিকে হাদির মৃত্যুর ঘটনায় ঝালকাঠিসহ বরিশাল বিভাগজুড়ে বাদ জুমা দোয়া মাহফিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শরিফ ওসমান হাদি। তাঁর বাবা ছিলেন একজন মাদরাসা শিক্ষক। পারিবারিক আদর্শ, নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ হাদির জীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ।
হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসায়। আলিম পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০–১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
ছাত্রজীবন শেষে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন হাদি। শুরুতে একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এক সন্তানের জনক হাদির জীবন আবর্তিত ছিল পরিবার, শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চাকে ঘিরে।
আজ সেই মানুষটি আর নেই। তবে নলছিটির নীরবতা, মানুষের চোখের জল আর প্রতিবাদের উচ্চারণে স্পষ্ট—শরিফ ওসমান হাদি শুধু একটি নাম নন; অনেকের কাছে তিনি একটি বিশ্বাস, একটি আদর্শ এবং একটি অসমাপ্ত লড়াইয়ের প্রতীক।
এফপি/জেএস
পত্নীতলায় সাংবাদিকের ওপর হামলা: দুই ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
শীতের রাতে পাড়া-গ্রামে জমে উঠেছে ব্যাডমিন্টন খেলার ধুম
তানোরে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ওয়াসা খুলনাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে
খুলনায় ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াজ্জু' র দুইদিনব্যাপী একাধিক কর্মসূচি