নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে সিমসংখ্যা আরো কমাচ্ছে সরকার। পয়লা জানুয়ারি থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সর্বোচ্চ ৫টি নতুন সিম নিতে পারবেন মোবাইল গ্রাহকরা। আর যাদের নামে ৬ থেকে ১০টি সিম কার্ড রয়েছে, সেই সংখ্যাও পাঁচে নামানো হবে ধাপে ধাপে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে বরাবরের মতোই আপত্তি তুলেছেন মোবাইল অপারেটররা।
এদিকে সিম ব্যবহারে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। যেখানে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো।
রাস্তাঘাটে মোবাইল সিম কেনার সময় গ্রাহকের অজান্তেই বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। যা দিয়ে অবৈধভাবে নিবন্ধন হচ্ছে অতিরিক্ত সিম।
অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পর্যালোচনায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, এক দিনেই একজন গ্রাহক দুইয়ের বেশি সিম কিনছেন। যা অস্বাভাবিক।
অক্টোবরে বিটিআরসির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য মতে দেশে বর্তমানে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার।
এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ৮ কোটি ৫৯ লাখ, রবি আজিয়াটার ৫ কোটি ৭৫ লাখ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৭৯ লাখ এবং টেলিটকের ৬৬ লাখ ৭০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে সিম ব্যবহারকারীসংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৯৯ লাখ। ২০২৩-এর অক্টোবরে ১৮ কোটি ৯৬ লাখ, ২০২২ সালে এ সময়ে ১৮ কোটি ১৬ লাখ, ২০২১ সালে ১৮ কোটি ১৩ লাখ। গত ১০ বছরে সিম ব্যবহারকারী সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি। ২০১৫ সালে দেশে সিম ব্যবহারকারী গ্রাহক ছিলেন ১৩ কোটি ৩৭ লাখ।
যেটি পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০২০-এ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ কোটিতে।
দেশে সিম ব্যবহারের অপব্যবহার ঠেকাতে সিম বন্ধ করে দেওয়ার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তার অংশ হিসেবে গত আগস্টে এক ব্যক্তির নামে ১০টির অধিক সিম থাকলে অতিরিক্ত সিম ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারের মাধ্যমে নিজ দায়িত্বে বাতিল (ডি-রেজিস্ট্রার) বা মালিকানা পরিবর্তনে নোটিস দেয় বিটিআরসি। সংস্থাটির একটি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে ২৬ কোটি ৬৩ লাখ নিবন্ধিত সিম রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৯ কোটি সিম সক্রিয় রয়েছে। এ সংখ্যা ২০ কোটির বেশি হবে। বাকি সিমগুলো নিবন্ধিত কিন্তু নিষ্ক্রিয়। গত আগস্ট পর্যন্ত সক্রিয় এক ব্যক্তির ১০টির বেশি সিম ছিল ৬৭ লাখ। গত তিন মাসে প্রায় ১৫ লাখ সিম গ্রাহক স্বেচ্ছায় বাতিল করেছেন। বাকি রয়েছে ৫০-৫৩ লাখ সিম। সেগুলো যেহেতু তিন মাসেও বাতিল করা হয়নি তাই সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের মাধ্যমে বাতিল করা হবে।
এ বিষয়ে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তিন মাস সময় দিয়েছিলাম ডি-রেজিস্ট্রেশন করতে, কিন্তু যেসব গ্রাহক এটি করেন নাই তাদের সক্রিয় সিম ডি-রেজিস্ট্রেশন করা হবে। কি পরিমাণ সিম ডি-রেজিস্ট্রেশন হয়নি সেটা দেখে বাতিল করা হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘পয়লা জানুয়ারিতে যিনি নতুন করে সিম নিবন্ধন করতে যাবেন, তার নামে পাঁচটির বেশি সিম নিবন্ধন করা হবে না।’
এফপি/অ