লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রামগতি বাজার সংলগ্ন খালটি দখল ও দূষণে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তুপে প্রায় মজে গেছে খালটি। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকায় খালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। তাই শুকনো মওসুমে খালটি দখল মুক্ত করে দ্রুত তা সংস্কারের দাবী এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রামগতি বাজার সংলগ্ন খালের ওপর দুই শতাধিক দোকান ঘর। দখলদারদের কবলে পড়ে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। খালের যতটুকু অংশ রক্ষা পেয়েছে, সেখানেও ফেলা হচ্ছে বাজারের আবর্জনা। সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাজারের পানি নিস্কাশনের জন্য নালা বা ড্রেন নেই, কিছু অংশে ড্রেন থাকলেও তা মজে গিয়েও জলাবন্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উপচে পড়ে। বর্ষাজুড়েই জলাবন্ধ থাকে এলাকাটি। এসময় মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দখল হওয়া অংশ উদ্ধার ও ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করা জরুরি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। তা না হলে খালটি অস্তিত্ব হারাবে বলেও জানান তাঁরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, খালের ওপর দোকানপাট হওয়াতে পানি নিস্কাশনের জায়গা নেই। যে যার মত করে প্রতিবছর দখল নিচ্ছে ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা আর ভোগান্তি। দীর্ঘদিন ধরেই খালের অস্তিত্ব সঙ্কটে। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতেইজলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে করেব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। দখলদারদের উচ্ছেদেপ্রশাসনওকোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, অন্যদিকে হচ্ছে না খালটি সংস্কার। বর্ষায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। ওইসময় স্থানীয়ভাবে ও প্রশাসনকে জানালেও বর্ষার অজুহাত দেখান। বর্ষা মওসুম চলে গেলে তাদের আর কোন খবর থাকে না। তাই এখনদ্রুত খালটির অস্তিত্ব রক্ষায় প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে খালটি সংস্কারের দাবী আমাদের।
বড়খেরী ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষার্থী মো. আবিদ জানান, বর্ষা মওসুমে রামগতি বাজারে আসতে ইচ্ছে করে না। জলাবন্ধতা আর কাদামাটির সঙ্গে বাজারের ময়লা-আবর্জনা মিশে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। চলতি মওসুমে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি।
বাজারের ঔষধব্যবসায়ী মতিলাল দাস জানান, বৃষ্টি হলেই জলাবন্ধতারসৃষ্টি হয়ে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় বাজার। দখলদারদের কারণে খাল উপচে পানি প্লাবিত হয় বাজার সহ আমাদেরদোকানগুলোতে। বর্ষা মওসুমে প্রতিদিনই আমাদের দোকানে পানি ঢুকে। এখন শুকনো মওসুম এখনি খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করে সংস্কার করা প্রয়োজন।
বাজারের ব্যবসায়ী বিপ্লব মজুদার জানান, খালটি মজে যাওয়ার কারণে বাজারের পানি নামতে পারে না, ফলে অল্প বৃষ্টিতেও আমার দোকানে পানি ঢুকে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায়আমার দোকানের ভিতর দিয়ে পানি গড়িয়ে খালে প্রবেশ করে। বর্ষায় জলাবন্ধতা এড়াতে এখন শুকনো মওসুমে খালটি সংস্কার করা খুবই জরুরি। নচেৎ আমাদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।
খাল দখল করে দোকান করা ঘর মালিক রুহুল আমিন জানান, আমার দোকানের কিছু অংশ খালের উপর পড়েছে। সরকার চাইলে সে জায়গা ছেড়ে দিবো।
রামগতি বাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য গরীব হোসেন রাসেল জানান, কলেজের সামনে থেকে রামগতি দক্ষিণ বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক দোকান দীর্ঘ ১৮-২০ বছর ধরে অবৈধভাবে খাল দখল করে আছে।নজরদারি না থাকায় এতগুলো দোকানের মালিক নিজেদের ইচ্ছেমতো সীমানা বাড়িয়ে নিয়েছেন।
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত)মো.মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ দখলদারদের বারবার সর্তক করা হয়েছে। উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েউপজেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানও হচ্ছে না, খাল সংস্কারও হচ্ছে না, ফলে বাজারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, অবৈধভাবে দখলদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুতঅবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে শিগগির উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ছবিগুলো গতকাল শুক্রবার সকালে তোলা
এফপি/এমআই