কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করেই মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ৪৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩ জন সহকারী শিক্ষক বেতন বন্ধের কারণ ৫ নভেম্বর জানতে গেলে জেলা হিসাব রক্ষণের অডিট অফিসার মেহেদি হাসান শরিফ সহকারি শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ করার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়ার ১২ দিন অতিবাহিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি মুন্সীগঞ্জ জেলা হিসাব রক্ষক অফিসার মোঃ নোমান মাহমুদ।
কি কারনে জেলা হিসাব রক্ষন কার্যালয়ের অডিট অফিসার মেহেদি হাসান শরিফ এখনো বহাল তবিয়তে তার কর্মস্থলে রয়েছেন তা জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ জেলা হিসাব রক্ষক অফিসার মোঃ নোমান মাহমুদ জানান, অডিট অফিসার শরিফ যেদিন শিক্ষকদের সাথে অশোভন-খারাপ আচরণ করেছেন সেদিন আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। পরে শিক্ষক, সংবাদকর্মী ও পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি। অডিট অফিসার মেহেদি হাসান শরিফ শিক্ষকদের সাথে যে অশোভন ও খারাপ আচরণ করেছে তা খুবই দুঃখজনক। শিক্ষকরা তাদের বেতন কেনো হচ্ছে না তা জানতে জেলা হিসাব রক্ষন কার্যালয়ে আসতেই পারেন। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে অডিট অফিসার মেহেদি হাসান শরিফের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বেতন বঞ্চিত একাধিক শিক্ষক জানান, মুন্সীগঞ্জ সদরের ৪৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩ জন সহকারি শিক্ষকের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে সদর উপজেলার ৪৩ টি বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকরা চলতি মাসে বেতন উত্তোলন করতে পারেননি। এতে হতাশ ও ভোগান্তিতে পরেন ৬৩ জন সহকারি শিক্ষকের পরিবার।
গত অক্টোবর মাসের বেতন না পাওয়ায় ওইসব শিক্ষকদের পরিবার পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
জানা গেছে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে এসব শিক্ষক সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। ১০ বছর পূর্তিতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তারা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হন। সেই মোতাবেক নিয়মিত তাদের বেতন হয়ে আসছিল।
দীর্ঘদিন সেই সুবিধাভোগ করে আসলেও পূর্ব ঘোষনা বা লিখিত কোনো নির্দেশনা ছাড়াই হঠাৎ করেই অক্টোবর মাসের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।
এদিকে, শিক্ষকদের বেতন বন্ধের কারণ হিসেবে জেলা হিসাব রক্ষন কার্যালয় ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
এনিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) শিক্ষকরা জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের বরাবরে ওই অডিট অফিসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সহকারি শিক্ষকরা।
সদর উপজেলার নৈরপুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, চলতি বছরের গত ২০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রের আলোকে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে এসব শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেড বাতিল হতে পারে বলে জানান। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বেতন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। অথচ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, এরপর চলতি মাসে আমরা গত অক্টোবর মাসের বেতন উত্তোলন করতে গিয়ে দেখি আমাদের বেতন হয়নি। এ বিষয়ে জানতে আমরা শিক্ষা অফিসে গেলে বলা হয় জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নির্দেশ এসেছে। কিন্তু সেই চিঠি কেউ আমাদের দেখাতে পারেনি। এ শিক্ষিক আরো অভিযোগ করে বলেন, বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা অডিটর অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ওই কর্মকর্তা তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ পর্যন্ত করেছেন। এমনকি হিসাবরক্ষন কার্যালয়ে প্রবেশের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
মুন্সীগঞ্জ সদরের ইদ্রাকপুর ১ নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহমিনা বেগমসহ একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। শিক্ষকরা দাবি করেছেন, ওই কর্মকর্তা তাঁদের 'অকথ্য ভাষায় গালাগাল' করেন এবং অফিসে প্রবেশের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
সদর উপজেলার নৈরপুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো: তানজির মোল্লা বলেন, চাকরীতে যোগদানের ১০ বছর পর আমরা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হই। সেই মোতাবেক আমাদের বেতন হয়ে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চলতি মাসে বেতন উত্তোলনে গেলে বাঁধে বিপত্তি। অক্টোবর মাসের বেতন হয়নি আমাদের। এ অবস্থায় চলতি মাসে কোনো বেতন তুলতে পারিনি। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে।
গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিট অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ বলেন, তাদের সাথে খারাপ আচরণ ও গালাগালি করার দাবি মিথ্যা। তারা উল্টো ২০-২৫ জন নিয়ে এসে আমাকে হুমকি দিয়েছে। আর তাদের বেতন আটকে রাখা হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের চিঠির কারনে।
পক্ষান্তরে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন মিঞা বলেন, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের লিখিত চিঠির প্রেক্ষিতে ওইসব শিক্ষকের বেতন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রেড উন্নীতকরণ সমস্যায় বেতন আটকে গেছে তাদের। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ওই শিক্ষকরা আগের গ্রেডে নিয়মিত বেতন পাবেন। এতে ১৫-১৬ দিন সময় লাগতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন মিঞাকে নির্দেশ দিয়েছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন প্রতি মাসের ন্যায় নিয়মিত করে ফেলা হয়। এতে যেনো কোন কালক্ষেপন করা না হয় সে ব্যাপারেও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সোমবার (১৭ নভেম্বর) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসি) মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া (বন্ধ) যায়নি।
এফপি/অ