কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের কাস্তুল ইউনিয়ন পরিষদের লীজ দেয়া সবুরের খাল নিয়ে সংঘর্ষের জেরে রিফাত ইটভাটায় হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল আনুমানিক ১০ ঘটিকায় কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে অবস্থিত মেসার্স রিফাত ইটভাটায় লুটপাট, ভাঙচুর ও হামলার এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মসজিদ জামের বাসিন্দা মাসুদ রেজা চৌধুরী শিপু বলেন, মেসার্স রিফাত ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী হাজী শেখ জসিম উদ্দিনের ইট ভাটার ম্যানেজার ক্যাশিয়ার ও উনার ব্যাক্তিগত সহযোগী তিন চারজন প্রতিদিনের মতই ইট ভাটায় অবস্থিত তার অফিসে যান। এর কিছুক্ষণ পরই শতাধিক মানুষ অতর্কিত হামলা চালায়।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, কাস্তুল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাজী জসীম উদ্দিনের লীজ নেয়া সবুরের খাল নিয়ে বাহাদুরপুর গ্রামবাসী ও লীজগ্রহীতা গ্রুপের মধ্যে দখল পাল্টা দখল নিয়ে দন্ধ চলছিল। উক্ত দন্ধের জেরে আগে থেকেই উৎপেতে থাকা বাহাদুরপুর গ্রামবাসীর একটি পক্ষের প্রধান জুবায়ের ওরফে রুবেল ও গ্রামবাসীদের পক্ষটি হাজী জসীম উদ্দিনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিফাত ব্রিকস ইটভাটায় দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একযোগে হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত জনি মিয়া (৪০) জানান, প্রতিদিনের মতো আমরা ইটভাটায় কাজের জন্য ঢোকার সাথে সাথেই আচমকা হামলার স্বীকার হই।
কোন কিছু বুঝার আগেই বাহাদুরপুর গ্রামের এখলাস ভূইয়া, মারুফ ভূইয়া' সোহেলের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ ইটভাটায় হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালাতে শুরু করে।
আতংকিত শ্রমিক কর্মচারীরা তাঁদের কর্মস্থল রক্ষায় এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে বাহাদুরপুর গ্রামের জুবায়ের ওরফে রুবেলের হুকুমে একযোগে হামলা করে।
উল্লেখ্য জুবায়ের ওরফে রুবেল অষ্টগ্রাম থানার দুটি মামলার আসামী বলে জানা যায়। এ রকম অতর্কিত হামলার পরিস্থিতিতে ভাটায় অবস্থিত স্বত্বাধিকারী হাজী জসিম ও তার সঙ্গীরা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি শুরু করলে হামলাকারীদের আঘাতে অষ্টগ্রাম সদরের কেনান মিয়া(৫৮), বাপ্পি (৩৮), জনি (৪০),ফারুক(৫০), শফিকুল (৪০), মাসুক মিয়া (৪২) সহ অনেকেই আহত হন।
এ সময় ইটনা থেকে মোটরসাইকেল যোগে বাজিতপুর যাওয়ার পথে সোহেল মিয়া (৩৫) নামে এক পথচারীকে আক্রমণকারীরা রেহায় দেয়নি। তাঁর গ্রামের বাড়ি ইটনায় বলে চিৎকার করলেও থাকে রক্তাক্ত আহত করে। বর্তমানে অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পথচারী সোহেল অষ্টগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও জানা যায়।
উক্ত ইটভাটাটি বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম সড়কের পাশে বাহাদুরপুর গ্রামের পাশেই অবস্থিত হওয়ার কারনে সহজেই লুটপাটকারীদের হামলার শিকার হন। হালার স্বীকার কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লুটপাটের ঘটনায় ইটভাটায় অবস্থিত শেখ জসিমের অফিস ভাংচুর চালিয়েছে। এছাড়া ইটভাটার পাশে বাধা জসীম উদ্দিনের স্পিডবোট, দুইটা মোটরসাইকেল, অর্ধকোটি টাকা মূল্যের অটো ইট তৈরির মেশিন, মাটি কাটার ভেকুতে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়েছে। অভিযোগ প্সীডবোডের মেশিনটিও ছুরি করে নিয়ে গিয়েছে হামলাকারীরা।
অতর্কিত হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম থানা পুলিশ ও মিঠামইনে অবস্থিত সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং জসীম উদ্দীনসহ সকলকে উদ্ধার করে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলেও জানা যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ইটভাটার মালিক শেখ জসীম উদ্দীন হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ইটভাটায় আনুমানিক ৮০/৮২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আমার অফিসের ক্যাশে থাকা সাড়ে ৪ লাখ টাকাও নিয়ে যায়। পুলিশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের উদ্ধার করেন।আমি দ্রুত এ বিষয়ে আইনি প্রতিকারের দাবি করছি।
অভিযুক্ত গ্রুপের প্রধান জুবায়ের ওরফে রুবেল বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র অংশ। আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সবুরের খালের মাছ লুটের জন্য এগুলো সাজানো নাটক। পুলিশ-সেনাবাহীনি তাহলে তাদের উদ্ধারের বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারেনি।
এ ব্যাপারে অষ্টগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সেনাবাহিনীর গিয়ে যৌথভাবে উদ্ধার করেছেন। বিষয়টি পরবর্তী আইনি পদক্ষেপে রয়েছে।
এফপি/অ