রংপুরে মা হত্যা মামলায় ছেলের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) মা হত্যা মামলায় পুত্র মোঃ জামিল মিয়া ওরফে ভেলনকে মৃত্যুদন্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মোঃ নাজির। সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর (ইনচার্জ) আমিনুল ইসলাম।
জানা যায়, রংপুর জেলার কাউনিয়া থানাধীন নাজিরদহ ময়নুদ্দিনটারী মৌজার আব্দুর রাজ্জাক লাল মিয়া ও মৃত জামিলা বেগমের ছেলে মোঃ জামিল মিয়া ভেলন'র স্ত্রীর সাথে তার মা জামিলার মনোমালিন্য হওয়ায় জামিল মিয়ার স্ত্রী কাকলী খাতুন পিত্রালয়ে চলে যায়। এ কারণে জামিল মিয়া তার মা জামিলা বেগমকে দোষারোপ করতে থাকে। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে জামিল মিয়া ও তার মা জামিলা একই ঘরে পৃথক দুটি খাটে বসবাস করতে থাকে এবং জামিল মিয়া তার মাকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এক পর্যায়ে গত ১৯ আগস্ট/২০২২ ইং তারিখ রাতে খাওয়া শেষে জামিল মিয়া ও তার মা জামিলা খাতুন একই ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। ওই দিন দিবাগত রাত ০১ টার দিকে জামিল মিয়া দেখে তার মা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ঐ অবস্থায় জামিল মিয়া তার মায়ের নাক মুখে বালিশ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং লাশ ওই ঘরের মেঝেতে গর্ত করে পুঁতে রাখে। তার কয়েকদিন পর প্রতিবেশীরা জামিলা বেগমকে দেখতে না পেয়ে জামিল মিয়াকে তার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে জামিল মিয়া প্রতিবেশীদের জানায় তার মা কোথায় গেছে জানে না।
পরবর্তীতে ২৪/০৮/২০২২ ইং তারিখ প্রতিবেশীরাসহ জামিলের মামাতো বোন রেজিনা জামিলকে বলে তারা ঘর চেক করবে তখন জামিল মিয়া বসত ঘরের দরজা খুলে দিলে রেজিনা ঘরের ভিতর ঢুকে খোঁজাখুঁজি করে দেখতে পায় খাটের নীচে মাটি উঁচু হয়ে আছে এবং ঘুঘরি পোকা মাটি তুলেছে এবং ঘরে হালকা গন্ধ পাওয়া যায়। তখন জামিল মিয়ার মামাতো বোনসহ গ্রামবাসীরা খাটের নীচে কোদাল দিয়ে খুঁড়লে মৃত জামিলার হাত বের হয়। তখন গ্রামবাসী জামিলকে আটক করে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে জামিলার বসত ঘরের খাঁটের নীচ থেকে মাটি খুঁড়ে জামিলার লাশ বের করে। অতঃপর জামিলা বেগমের ভাই মোঃ ছামসুল হক বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। যার দায়রা মামলা নং-১১৩৪/২০২৩।
উক্ত মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ১২ জন সাক্ষী পরীক্ষা করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে উপরোক্ত রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি মোঃ আফতাব উদ্দিন এবং আসামীপক্ষের স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মোঃ শামিম আল মামুন মামলাটি পরিচালনা করেন।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় সাক্ষী ও সব তথ্যের সত্যতা পাওয়ায় মহামান্য জর্জ রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জর্জ ফজলে খোদা মোঃ নাজির আসামী জামিল মিয়াকে মৃত্যুদন্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন।
এফপি/অ