Dhaka, Wednesday | 29 October 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 29 October 2025 | English
খতিব মহিবুল্লাহ নিখোঁজের ঘটনাটি সাজানো নাটক
৩ বিভাগের জন্য দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস
শুকিয়ে যাওয়া তিস্তার বুকে লাখো মানুষের হাহাকার
কমলো সোনার দাম, আজ থেকেই কার্যকর
শিরোনাম:

শুকিয়ে যাওয়া তিস্তার বুকে লাখো মানুষের হাহাকার

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৩৯ পিএম  (ভিজিটর : ৬৫)

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবনরেখা তিস্তা নদী। এই নদীকে ঘিরেই এই অঞ্চলের লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। অথচ উত্তরাঞ্চলের প্রাণ তিস্তা নদী আজ মৃতপ্রায়।

একসময়ের খরস্রোতা এ নদী এখন বছরের অধিকাংশ সময় শুকনো থাকে। বর্ষায় ভাসে, আবার শীতে পরিণত হয় মরুভূমির মতো ফেটে যাওয়া বালুচরে। নদীভাঙন, চর গঠন ও তীব্র পানিসঙ্কটে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগ।

অক্টোবরের শেষ ভাগেই পানি শুন্য হয়ে পড়েছে খরস্রোতা তিস্তা। বুক থেকে নেমে গেছে পানি, ফলে মরে গেছে তিস্তা। শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই নদীর এ বেহাল দশায় সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই যৌবন হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই নদীটি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গত ১০ দিনে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ গড়ে রয়েছে ১৭ হাজার কিউসেক। প্রতিদিনই কমছে পানি। ধীরে ধীরে পানি শুন্য হয়ে মরে যাওয়া এই তিস্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনসংগ্রাম বাড়ছে তিস্তাপাড়ের কৃষক ও জেলেদের।

ভারতের গজলডোবা নামক স্থানের প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারেজ নির্মাণ করে এ নদীর উচ্ছল দুর্বার গতিকে সভ্য সমাজের মানুষরা রোধ করে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে বুক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে পানি নামের জীবন।

এই নদীর পারে দাঁড়ালে এখন বাতাসে শুনতে পাওয়া যায় ক্ষীণকায় তিস্তার দীর্ঘশ্বাস আর গুমরে ওঠা কান্নার শব্দ। দীর্ঘ এ তিস্তাজুড়ে শুধুই ধু ধু বালুচর। প্রতিদিন একটু একটু করে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আশা-নিরাশা ও লুকোচুরির কবলে পড়েছে এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা।

তিস্তা নদীর নাব্যতা এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে আসন্ন রবি মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। প্রতিদিনই পানি কমছে। নদীর বুকভরা বালুচর। কোথাও সামান্য পানি, আবার কোথাও চোখে পড়ে দিগন্তজোড়া বালুচর।

হিমালয়ের গ্লেশিয়ার থেকে উৎপন্ন তিস্তা নদী ভারতের সিকিম পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি অতিক্রম করে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করেছে।

এরপর নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা হয়ে নদীটি ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়েছে। তিস্তা নদীকে ঘিরেই উত্তরবঙ্গের কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছিল। একসময় এই নদীর চরাঞ্চলে ধান, পাট, ভুট্টা, তিল ও সবজি চাষে ছিল সমৃদ্ধি। ১৯৮৩ সালে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের পর থেকেই তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানিসঙ্কট আর বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা এখন নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে তিস্তা নদীর ভাঙনে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নদীর তীরঘেঁষে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি লালমনিরহাটের মহিপুর এলাকায় তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ৩৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রাজারহাটে ৪টি গ্রামে ৭ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি, গঙ্গাচড়ায় ৫০টিরও বেশি পরিবার ঘর হারিয়েছে এবং কুড়িগ্রামের উলিপুরে শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।

তিস্তা বাঁচাতে গত কয়েক বছরে উত্তরাঞ্চলে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। ‘তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও’স্লোগানে রংপুর বিভাগজুড়ে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল হয়েছে।

সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে নদীর ১১৫ কিলোমিটাজুড়ে ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদীরা। তিস্তার দুই তীরে একযোগে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচিতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীদের দাবি, বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যানে নদী পুনর্খনন, চরবাসীর পুনর্বাসন ও বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক বাজেট অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন সূত্রে জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হবে।

১০ বছরের মেয়াদে দুই ধাপে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (৫ বছর) ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০০ কোটি আসবে চীন থেকে ঋণ হিসেবে এবং ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকার যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের জন্য ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে কথা নয়, কাজ শুরুর।

পাউবোর রংপুর অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে অক্টোবরের মাঝামাঝিতেই পানি কমতে শুরু করেছে। যদিও আসন্ন সেচ মৌসুমে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন তা ব্যারেজে রয়েছে। তবে দ্রুত তিস্তা খনন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

নদী বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন ওয়াদুদ মনে করেন, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে যদি এই নদী খনন করা না হয় তাহলে গোটা উত্তর অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। তিস্তার প্রভাব ইতিমধ্যেই উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতিতে পড়েছে। এই নদীর কারণেই ঋতুর সাথে কোনো কিছুরই মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নদীটি আজ মরে গেছে। এই নদী বাঁচাতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝