Dhaka, Wednesday | 29 October 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 29 October 2025 | English
টানা ৫ দিন ভারি বর্ষণের আভাস
৫০ লাখ টাকা পাচ্ছে নারী ফুটবল দল, হকি পাবে ২১ লাখ
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে ৩ ডিগ্রি
খতিব মহিবুল্লাহ নিখোঁজের ঘটনাটি সাজানো নাটক
শিরোনাম:

পরিবেশ অধিদপ্তর নিরব শুরু হচ্ছে অবৈধ ইটভাটা

প্রকাশ: রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ৩:২১ পিএম  (ভিজিটর : ৬১)

এখন হেমন্তকাল, শীত আসতে এখনো মাস খানেক সময় থাকলেও ইটভাটার মালিকরা তাদের ইট তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে । সরকারি অনুমোদন থাক বা না থাক তারা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে অনায়াসে । আর সেদিকে ফিরেও থাকান না পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তা বাবুরা। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জমির উদ্দিনের সাথে কথা হলে উল্টো প্রতিবেদককে  প্রশ্ন করে কোন পত্রিকায় কাজ করি এবং নিউজ করার জন্য । 

এদিকে স্থানীয়দের অভিমত পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব কর্তাবাবুদের আস্কারা পেয়ে জেলার পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছে সমাজের কিছু মানুষ। অভিযোগ আছে বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশ অনুকূলে অনেক অভিযানের সাথে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবগত করা হলেও এই অধিদপ্তর এক পাও নড়েন না নিজ জায়গা থেকে । সম্প্রতি রামু উপজেরায় বালি জব্দ করা হলে পরিবেশ আইনে বালি খেকোদের জন্য পরিবেশ আইনে মামলার কথা বলা হলেও এই উপ পরিচালক জমির উদ্দিন তা মাথায় নেন না।

সচেতন মহল মনে করছে এই দপ্তর কিছু সুবিধা পায় বিধায় তারা অফিস থেকে কোথাও সহজে যান না তথ্য পাওয়ার পরেও। এদিকে কক্সবাজারে হোটেল মোটেল জোনে অবাদে চলছে পরিবশে অধিদপ্তরের ছাড়পত্রবিহীন শত শত হোটেল মোটেল । এসব হোটেল মোটেল থেকে প্রতিমাসে একটি সুবিধা পান বলে মনে করছে একটি মহল ।
  
তেচ্ছিপুলের আরিফ অতিষ্ট হয়ে উঠছে নিজ বাড়ির পাশে ইটভাটা থাকায় । লোকালয়ে ইটভাটার অনুমতি দেওয়ার আইন না থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু কর্তাবাবুর কারণে আইন তোয়াক্কা না করে শুরু হচ্ছে ইটভাটার কাজ । এই এলাকা থেকে রামু লম্বরী পাড়া পর্যন্ত ইটভাটা রয়েছে ৫টি। তা হলো সিরাজুল ইসলাম ভুট্টোর গইঅ, মোঃ হোসেন এর ঐগঅ, মোঃ জামাল হোসন এর তগখ, ও একেলাস হোসেনের তগখ  ফরিদুল আলমের তঋ  ইটভাটা। এই ৫টি ইটভাটা থেকে প্রতিদিন ইট যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় ।

ইট তৈরি করতে আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি । আরিফ আরো জানান, এই সড়ক দিয়ে ইটভাটার গাড়ি চলাচলের কারণে সবসময় ধূলাবালি লেগেই থাকে যার কারণে সবসময় এখানকার মানুষ অসুস্থ দিন যাপন করছে। লোকালয়ে ইটভাটার কারণে সবসময় বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হয় । যদি খোলা রাখি তবে ধূলাবলি এসে ভরে যায় ।  আমরা ইটভাটার জন্য অসহ্য দিন যাপন করছি। এখানে যারা ইটভাটার মালিক তারা কেউ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবার কেউ সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য। যার কারণে প্রশাসন এখানে তেমন আসেনা । তারা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করে যাচ্ছে । 

এদিকে গত কয়েক বছরে কক্সবাজারের রামুতে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪২ ইট ভাটা, যার অধিকাংশই সরকারী অনুমোদন নেই। যে কয়টি ভাটার অনুমোদন রয়েছে সেগুলোর লাইসেন্সও মেয়াদোর্ত্তীন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরব এবং কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করছে না। 

তথ্যসূত্রে জানা যায়, রামু উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ৪২টি। তৎমধ্যে ১৯টি ইটভাটার অনুমোদন থাকলেও কোনটির লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষি জমি ও বনাঞ্চলের পাশে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ইট পোড়ানো লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট এমনকি ভ্যাট-আয়কর প্রদানের কাগজপত্র ছাড়াই ইটভাটার মালিকরা আবাদী জমি ও জনবসতি এলাকাসহ স্কুল-কলেজের পাশে রাত-দিন ২৪ ঘন্টা ইট পোড়ানো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। 

অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ তে বলা আছে, 'আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের বিধান না থাকলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর বে-আইনীভাবে লাভবান হয়ে আপত্তি নাই মর্মে প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে এসব অবৈধ ইটভাটা চলার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। ফসলি জমির মাটি ও বনাঞ্চলের গাছ উজাড় করে চলছে এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ। ইটভাটাগুলো থেকে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এছাড়া কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাসের পাশাপাশি রয়েছে ফলন বিপর্যয়ের আশংকা। ভাটার ইট-মাটি পরিবহনের কারনে  গ্রামীন সড়কগুলো খানা-খন্দকে পরিণত হয়েছে। অস্বাভাবিক ধুলোয় বিপর্যস্ত জনজীবন। এদিকে মাঝেমধ্যে ভাটা মালিককে নামমাত্র জরিমানা করেই প্রশাসন দায় সেরেছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। 

একটি সূত্র বলছে, এই অবৈধ ইটভাটাগুরো সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্টানে সরকারি আমলা ও স্থানীয় নেতাদের ডোনেশনের মাধ্যমে তাদের এই ব্রিকফিল্ড চালিয়ে আসছে। যার কারণে আমলা ও নেতাদের অবৈধ ইটভাটা নিয়ে কোন ধরনের মাথাব্যথা নেই । 

এব্যাপারে রামুর নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, রামুর অধিকাংশ ইটভাটার নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। বেশিরভাগ ভাটায় স্থানীয় রাজনীতিক ও জন প্রতিনিধিদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বনাঞ্চল ও ফসলী জমিতে গড়ে তুলেছে নিয়মবহির্ভূত ইটভাটা। আর এসব ইটভাটা গিলে খাচ্ছে  ফসলী জমির মাটি আর উজাড় করছে বনাঞ্চল। এতে করে পরিবেশ বিপন্নের পাশাপাশি ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে।

রামু কলেজ গেইটের স্থানীয় একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিবেশ আইনে জনবসতি থেকে দূরে ইটভাটা করার নীতিমালা থাকলেও আমার বাড়ির পাশের ইটভাটা কি নীতিমালা মেনে করেছে? যদি পরিবেশ আইন নীতিমালা মেনে না চলে তা হলে এই ইটভাট কিভাবে চলছে? ইটভাটার ধুলো ও ধোয়ার কারনে বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হয়।

পরিবেশবাদীরা বলছে, নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। অবৈধভাবে কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরির কারণে কমছে চাষাবাদের জমি। এছাড়া, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারে কমছে গাছ। ফলে বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে বনাঞ্চল।  পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা প্রস্তুত আইন অনুযায়ী সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি ও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। এছাড়া, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর এলাকায়ও ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। অন্যদিকে ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা থেকে মাটি কেটে কাঁচামাল হিসেবে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারও নিষিদ্ধ।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার অঞ্চল এর সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক  এইচ এম এরশাদ জানান, কক্সবাজার জেলা এখন ইটভাটার শহরে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে তারা ইটভাটা তৈরি করছে। এদের বিরোদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি। অন্যথায় বাপা আন্দোলনের ডাক দিবে। একদিকে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও অতিরিক্তি মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহার হচ্ছে। কাঠ ব্যবহারের ফলে গাছের সংখ্যা কমছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশ আইন অমান্য করে গড়ে উঠা এসব ইটভাটার কারণে কমে যাচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য, কৃষি জমি ও উজাড় হচ্ছে বিশাল বনভূমি। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বয়স্ক ও শিশুরা। ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে গাছের ফল ও  পাখির আবাস।চিমনি বিশিষ্ট ভাটা ২০০১ সাল থেকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বেশির ভাগ ড্রাম চিমনি বিশিষ্ট ভাটা রয়েছে রামু, চকরিয়া এবং উখিয়ায়। এগুলো নির্মান করা হয়েছে নদীর কাছে, উপকূল, পাহাড়ি ও জনবহুল এলাকায়। এসব ভাটায় জমির উপর স্তরের মাটি ব্যবহার করায় জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে, কমছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বিশেষজ্ঞদের মতে, জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ হবে না। ফসলি জমির মাটির উপরি অংশ কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমির ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকাংশে কমে যাবে। এতে হুমকির মুখে পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।

কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমিরউদ্দিনকে ফোন করা হলে কোন তথ্য লাগলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার কথা বলে ফোন রেখে দেন ।  

এফপি/অ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝