| শিরোনাম: |

ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে (বুথ) ব্যালট পেপারে সিল, ভাঁজ করা এবং বাক্সে ফেলার জন্য একজন ভোটার গড়ে সর্বোচ্চ সময় পাবেন ৫২ সেকেন্ড। এর মধ্যে নারী ভোটার গড়ে সময় পাবেন ৫৭ সেকেন্ড আর পুরুষ ভোটার পাবেন ৪৮ সেকেন্ড। সংসদ নির্বাচনের দিন একসঙ্গে গণভোট হলে এ সময়ের মধ্যেই দুই ব্যালটের ভোট শেষ করতে হবে।
একটি নারী বুথে ৫০০ আর পুরুষ বুথে ৬০০ এবং একটি কেন্দ্রে তিন হাজার ভোটার ভোট দেবেন– এমন হিসাব কষে এবার কেন্দ্র ও বুথবিন্যাস করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাধারণত সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা ভোট গ্রহণ হয়। সে হিসাবে ৪৮০ মিনিটের মধ্যে একটি নারী বুথে ৫০০ জন এবং পুরুষ বুথে ৬০০ জনকে ভোট দিতে হবে। বিশ্লেষকরা অবশ্য ইসির এই সিদ্ধান্তকে ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন।
ইসির একাধিক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, সম্ভাব্য কেন্দ্রের যে তালিকা তারা ইসি সচিবালয়ে পাঠিয়েছিলেন, সেখানে একটি ভোট, অর্থাৎ সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে গণভোট হবে– এমন তথ্য তাদের কাছে ছিল না।
এবার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে বুথ কমানো হয়েছে বলে ইসি সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এরই মধ্যে এই সিদ্ধান্তকে নিজেদের সাফল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, প্রতিটি কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে কমিশন প্রায় ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে। বুথপ্রতি ভোটার বাড়ানোর কারণে প্রায় ৪৯ হাজার ভোটকক্ষ কমানো গেছে। একই সঙ্গে প্রায় দেড় লাখ নির্বাচন কর্মকর্তার প্রয়োজন পড়বে না।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগের সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার কক্ষপ্রতি গড়ে ১০০ ভোটার বেড়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের পর নতুন যুক্ত হয়েছেন ৭৬ লাখ ভোটার। বিপরীতে ৬০০ কেন্দ্র বাড়ানোর পরও বুথ কমেছে ১৬ হাজার।
ইসি কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের প্রস্তাব আমলে নিয়েই কেন্দ্র নির্বাচনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৩০০ সংসদীয় আসনে কেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১টি। পুরুষের জন্য এক লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং নারীর জন্য এক লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি বুথ রাখা হয়েছে, অর্থাৎ মোট বুথ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৯টি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার ১৫০টি। বুথ ছিল দুই লাখ ৬১ হাজার ৪৭২টি। ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে ইসি কেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকারের চেয়ে জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হয়, ভোট দিতে সময়ও কম লাগে। তবে এক মিনিটের কম সময় পাওয়া নিয়ে ভোটারদের বিড়ম্বনায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাঁর মতে, কেন্দ্রের গোপন কক্ষেই বেশির ভাগ ভোটার এক থেকে দেড় মিনিট সময় ব্যয় করেন। এরপর ভোটার শনাক্ত ও হাতে কালি লাগানো এবং ব্যালটের মুড়িতে সই দেওয়াসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় তিন থেকে চার মিনিট সময় লেগে যায়।
দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ তিন সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার ছিল না বললেই চলে। তবে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত বছর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না। কোনো কেন্দ্রে এক ঘণ্টায়, আবার কোনো কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টায় একটি ভোট পড়েছে।
এদিকে, বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের দিনেই জুলাই সনদের ওপর গণভোট একই সঙ্গে করতে প্রস্তাব দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে একাধিক প্রস্তাবের মধ্যে গণভোট একই দিনে করার কথাও বলা আছে।
নির্বাচন বিশ্লেষক মো.আবদুল আলীম বলেন, গণভোটের কথা মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা করা হয়নি। সংসদের ভোট ও গণভোট এক দিনে হলে ইসির এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ, এত অল্প সময়ে দুটি ব্যালটে ভোট শেষ করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, গণভোটের বিষয়টি এমনিতেও দেশের মানুষের কাছে নতুন। এই ভোট হবে আবার প্যাকেজ আকারে। সর্বশেষ ১৯৯১ সালের পরে দেশের মানুষ আর গণভোট দেখেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় বাঁচানোর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার দক্ষতার ওপর। বুথের সামনে থাকা আনসার থেকে শুরু করে পোলিং এজেন্ট এবং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
গত সোমবার ইসি চূড়ান্ত কেন্দ্র তালিকা প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, এবার ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্রের দুই লাখ ৪৬ হাজার ৭৩৯টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। আগামী শুক্রবার আরেকবার হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে।
বুথে যেভাবে ভোট দেন ভোটার
একজন ভোটার কক্ষে ঢোকার পরে প্রথমেই তাঁকে ওই কেন্দ্রের তালিকায় তাঁর নাম শনাক্ত করা হয়। এতে প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত পোলিং এজেন্টদের সহায়তা নেন পোলিং অফিসার। এরপর ব্যালট পেপার ইস্যু করতে কর্মকর্তা ব্যালটের মুড়িতে সই করে ভোটারের হাতে তুলে দেন এবং তাঁর হাতে অমোচনীয় কালি লাগানো হয়। পরে ব্যালট হাতে নিয়ে ভোটার গোপন কক্ষে ঢোকেন। সেখানে তিনি পছন্দের প্রতীকে সিল দেন। গোপন কক্ষ থেকে বের হওয়ার আগেই তাঁকে ব্যালট ভাঁজ করতে হয়। পরে তিনি ব্যালটটি সংরক্ষিত বাক্সে ফেলে ভোট দেওয়ার কাজ শেষ করেন।
অতীতে ভোট গ্রহণের কাজে অংশ নিয়েছেন– এমন একাধিক পোলিং অফিসারের মতে, এই কাজ সম্পন্ন করতে ভোটারের চার থেকে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। নারী ভোটারের ক্ষেত্রে এই সময় লাগে আরও বেশি।
এফপি/অ