শিরোনাম: |
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবীণ বিএসসি শিক্ষক আলহাজ্ব ইউসুফ আলীকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে রাজকীয় বিদায় জানানো হয়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানেন তিনি।
আলহাজ্ব ইউসুফ আলী লালপুর উপজেলার কামারহাটি এলাকার বাসিন্দা। ১৯৯০ সালে লোকমানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী আয়োজিত বিদায় অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মিলনমেলায়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. তবিবুর রহমান। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন চক মাহাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, পাকা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষক আব্দুস সালাম সরকার, থানা যুবদল নেতা সুজন মাহমুদ, ইউনিয়ন যুবদল নেতা ইমদাদুল হক ও থানা ছাত্রদল নেতা হুমায়ন কবির প্রমুখ।
এসময় বিদায়ী শিক্ষককে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা, উপহার ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা প্রিয় শিক্ষকের স্মরণে আবেগঘন বক্তব্য ও কবিতা পাঠ করে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. তবিবুর রহমান বলেন, “আলহাজ্ব ইউসুফ আলী একজন সৎ ও আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। তিনি সততার সঙ্গে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, অবসরের পরেও তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে পরামর্শ দেবেন। তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।”
সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, “সময় হলে সবাইকেই অবসরে যেতে হয়। তিনিও একদিন যাবেন (২০৩০ সালে)। ইউসুফ স্যার সম্পর্কে আমার মামা শ্বশুর। তিনি ছিলেন ধার্মিক ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। বিদ্যালয়ে যত সমস্যা হতো, তিনি নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করতেন। তার বিদায়ে একটি শূন্যতা তৈরি হলো, যা সহজে পূরণ হবে না।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোমিনুল ইসলাম বলেন, “আলহাজ্ব ইউসুফ আলী ছিলেন বিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রবীণ শিক্ষক। তার বিদায়ের মাধ্যমে একটি প্রজন্মের পরিবর্তন ঘটল। তিনি নিয়মকানুন মেনে বিদ্যালয় পরিচালনায় ছিলেন আদর্শ উদাহরণ। তার ব্যক্তিত্ব ও ধর্মপরায়ণতা আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনি যেমন সম্মানীয় ব্যক্তি, তাকে আমরা সেই সম্মান দিয়েই ঘোড়ার গাড়িতে করে বিদায় জানিয়েছি।”
শিক্ষার্থীরা জানায়, “ইউসুফ স্যার খুব ভালোভাবে পড়াতেন। স্যার চলে যাওয়ায় আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। তার জন্য আমরা দোয়া ও ভালোবাসা জানাচ্ছি।”
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বিদায়ী শিক্ষক আলহাজ্ব ইউসুফ আলী বলেন, “বিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এই বিরল সম্মান পেয়ে আমি অভিভূত। জীবনে অনেক কঠিন সময় পার করেছি, তবু সততা ও ধৈর্য ধরে দায়িত্ব পালন করে আজ তার পরিসমাপ্তি হলো। আমি চাই, এ এলাকার সন্তানরা যেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে। এই বিদ্যালয় আমার জীবনের গর্বের অধ্যায়। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।”
এফপি/অআ