| শিরোনাম: |

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অতিরিক্ত লাভের প্রলোভনে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ ও প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন শেষে ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে অংশ নেন শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, যাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত শ্রেণির পেশাজীবী ও গৃহবধু।
ঘন্টা ব্যাপি অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেয়া ভুক্তভোগী অনেকের হাতে ‘গরিবের কাঁধে প্রশাসন ঘুমায়, গরীবের টাকা লুট নয় ন্যায় বিচার চাই ইত্যাদি প্লাকার্ড দেখা যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০০৭ সালে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সমবায় অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শুরুতে লোক দেখানো ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করলেও, পরে প্রতি লাখ টাকায় মাসে ১ হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সদস্য সংগ্রহ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
অধিক লাভের আশায় অন্তত ২০০ জন সদস্য তাদের কষ্টার্জিত জমানো টাকা, জমি বিক্রির অর্থ ও অবসর ভাতার টাকা এই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। বিভিন্ন মেয়াদে এভাবে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মতো আমানত জমা হয়। এছাড়াও সঞ্চয় কার্যক্রমের আওতায় প্রায় দুই হাজার সদস্যের কাছ থেকে আরও দেড় কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে হঠাৎ করেই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের কেউ আর প্রকাশ্যে আসেননি। ফোন নম্বরগুলো বন্ধ, ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী জোড়গাছ সাতঘরি পাড়ার সফিয়া বেওয়া, জেলেখা বেওয়া বলেন, ‘আমাদের জীবনের সঞ্চয়ের টাকাগুলো এখানে জমা রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম এখান থেকে পাওয়া লাভের টাকায় একটু ভালো থাকা যাবে। কিন্তু লাভ তো দূরে থাক, আসল টাকাই নেই।’
ছকিনা বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, ‘তিনি ভিক্ষা করে এবং মাটি কাটার কাজ করে গচ্ছিত সাড়ে ৬ লাখ টাকা সমিতিতে রেখেছিলেন। সে টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়।’
জোড়গাছ পুরাতন বাজার এলাকার মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও পরিচালকরা সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের জীবনভর সঞ্চয় হাতিয়ে নিয়েছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আমাদের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা হোক।’
সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুর আলম বলেন, ‘৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আমি নিজে বাদি হয়ে ২০২৪ সালে সমিতির পরিচালক ও ম্যানেজার আনিচুর রহমান আনিচ ও ক্যাশিয়ার মো. মিল্টনের নামে মামলা দায়ের করি। মামলাটি তদন্তাধিন রয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, বাকিদেরও শীঘ্রই পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে আত্মগোপনে থাকা সমিতির পরিচালক ও ম্যানেজার আনিচুর রহমান আনিচের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’
এফপি/অআ