কক্সবাজারের উখিয়ায় আবারও ঘটেছে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা। লোকালয়ে পাতা অবৈধ বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের খয়রাতি পাড়ার একটি ফাঁকা মাঠে হাতিটির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা বন বিভাগকে খবর দেন। পরে বন বিভাগের একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের শেষ ভাগে হাতিটি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সকালে ঘর থেকে বের হয়ে তারা মাঠে বিশাল আকৃতির নিথর দেহ দেখতে পান। কাছে গিয়ে নিশ্চিত হন এটি একটি বন্য হাতি। মুহূর্তেই এলাকায় ভিড় জমে যায়। অনেকে দৃশ্যটি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, পাশাপাশি ক্ষোভও প্রকাশ করেন—মানুষ ফসল রক্ষায় এমন নিষ্ঠুর পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছে যা সরাসরি প্রাণহানির কারণ হচ্ছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পায়ের ছাপ, বৈদ্যুতিক তারের অবশিষ্টাংশসহ বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেন। প্রাথমিক তদন্তে তাদের ধারণা, ফসল রক্ষায় কেউ কারেন্টযুক্ত জাল বা বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে রেখেছিল। হাতিটি সেই ফাঁদে স্পৃষ্ট হয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে মারা যায়। কর্মকর্তারা জানান, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে ময়নাতদন্ত করা হবে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ফাঁদ পাতা ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনায় পরিবেশবাদী ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, মানুষের সঙ্গে বন্য হাতির দ্বন্দ্ব বাড়লেও প্রতিরোধ হিসেবে বৈদ্যুতিক ফাঁদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে শুধু বন্যপ্রাণীই নয়, অসাবধানে কোনো মানুষ বা শিশুও প্রাণ হারাতে পারে। তাদের মতে, খাদ্যের অভাব, বনভূমি সংকোচন ও হাতির চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তাই দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই ও নিরাপদ সমাধান ছাড়া সংঘাত কমবে না।
এলাকাবাসী জানান, হাতিরা কখনো কখনো ফসল নষ্ট করলেও প্রাণহানি ঠেকাতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আরও সক্রিয় হতে হবে। তারা নিরাপদ ফসল-রক্ষা প্রযুক্তি চালুর দাবি জানান।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত বা অবহেলার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী হত্যার শাস্তি অর্থদণ্ড থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, মামলার বিষয়টি জেনেছি। মিটিংয়ে আছি, তাই বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘাত কমাতে বাফার জোন তৈরি, হাতির করিডর পুনরুদ্ধার, সৌরচালিত নিরাপদ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। এসব উদ্যোগ না নিলে এ ধরনের দুর্ঘটনা থামানো কঠিন হবে।
হাতিটির মৃত্যুর খবরে এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক। স্থানীয়রা, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ মিলে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এফপি/অ