চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ২৯ জন, মোট ৭২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৬৬ জন এবং মারা গেছেন ১৭ জন। একই সময়ে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৭৭ জন।
নগরের হালিশহর, বন্দর, বায়েজিদ, ডবলমুরিং ও সদরঘাটসহ কয়েকটি এলাকা ইতোমধ্যেই 'রেড জোন' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় প্রতিদিন কীটনাশক ছিটানোর নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয়দের অভিযোগ—স্প্রে কার্যক্রম সময়মতো বা পর্যাপ্তভাবে হচ্ছে না। ফলে মশা নিয়ন্ত্রণে আসছে না এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে চিকুনগুনিয়ার টেস্টে। সরকারি হাসপাতালে কিট না থাকায় বিনামূল্যে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন বেসরকারি ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করাতে, যেখানে একেকটি টেস্টে খরচ হচ্ছে এক হাজার টাকা বা তার বেশি।
চট্টগ্রামে এই কিট সংকট সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। যারা দৈনিক আয়ে সংসার চালান, তাদের পক্ষে বেসরকারি ল্যাবে টেস্ট করানো প্রায় অসম্ভব। অনেকেই পরীক্ষা না করেই বাড়িতে কষ্ট পাচ্ছেন বা স্থানীয় ফার্মেসির ওষুধ খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সময়মতো রোগ শনাক্ত না হওয়ায় অনেকের অবস্থা গুরুতর হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে টেস্টের ব্যবস্থা না করলে প্রকৃত সংক্রমণের চিত্র জানা যাবে না এবং রোগ নিয়ন্ত্রণও কঠিন হয়ে পড়বে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব বলেন, বর্ষার শুরুতেই মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া গেলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। এখনো সুযোগ আছে—ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করে, জমে থাকা পানি অপসারণ এবং নাগরিকদের সচেতন করে সংক্রমণ কমানো সম্ভব।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ‘১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালু করেছে। মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, হটস্পট এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি, বাড়তি স্প্রে ও জনসচেতনতা কার্যক্রম একসঙ্গে চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে তিনি নিজেই প্রতিটি জোন পরিদর্শন করবেন।
হালিশহরের বাসিন্দা রাশেদা খাতুন বলেন, “আমাদের এলাকায় ডেঙ্গু বাড়ছে। স্প্রে ঠিকমতো হয় না এখন আবার টেস্ট করতে গেলে বাইরে গিয়ে টাকা দিতে হয়। গরিব মানুষ কীভাবে সামলাবে?” বন্দর এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, “চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করতে গিয়ে দেখি সরকারি হাসপাতালে কিট নেই। বাধ্য হয়ে বেসরকারি ল্যাবে বেশি টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হলো। সবার পক্ষে এটা সম্ভব নয়।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। নাগরিকদেরও নিজেদের বাড়ির টব, ড্রাম ও ছাদে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রশাসনের উদ্যোগ এবং নাগরিকদের সচেতনতা একসঙ্গে কার্যকর হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
এফপি/অআ