রাতের আধারে সরকারি গাছ কাটার ঘটনায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম রোকনের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্যে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তার সমর্থকরা টরকী বাসস্ট্যান্ড ও বন্দর এলাকায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে রাতের আধারে পুলিশ কাটা গাছের টুকরাগুলো হাতেনাতে জব্দ করার ৬ দিন অতিবাহিত হলেও প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসির কারণে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই মিছিলে রোকনের সমর্থকদের পাশাপাশি কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের অগ্রভাগে দেখা গেছে যা সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে এ ঘটনাটি নতুন করে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
মিছিলে অংশ নিয়ে রোকনের সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে শ্লোগান দেন। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে এ ধরনের ক্ষমতার শো-ডাউন স্থানীয়দের কাছে সরাসরি ‘ক্ষমতার প্রদর্শন ও তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই মিছিলকে প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ার কৌশল হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই দেখছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘একদিকে প্রশাসন তদন্ত করছে, অন্যদিকে প্রকাশ্যে মিছিল করে নিজের শক্তি দেখাচ্ছেন রোকন। এতে স্পষ্ট যে তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছেন।’ তারা আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সরকারি গাছ কেটে হাতেনাতে ধরা পড়েন, তিনি আবার দলবল নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেন! এতে বোঝা যায়, প্রশাসনকে উপহাস করার সাহস রাখেন তিনি। এভাবে যদি অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তবে ভবিষ্যতে কেউ সরকারি সম্পদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে না।’
এর আগে গত রোববার ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার টরকী বন্দরের ছাগলহাট সংলগ্ন হাজী আবুল হোসেনের বাড়ির সামনের সরকারি সড়কের পাশে বিভিন্ন প্রজাতির সাতটি গাছ শ্রমিকদের নিয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম রোকন কেটে নিচ্ছিলেন। স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে কাটা গাছ জব্দ করেন।
ঘটনার চারদিন পর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) শফিকুল ইসলাম রোকনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। নোটিশে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দেওয়ার পাশাপাশি স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম খান বাপ্পির স্বাক্ষরিত নোটিশে রোকনের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে বলা হয় এবং অভিযোগের বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম রোকন বলেন, আমার শুভাকাক্সক্ষী ও সহকর্মীরা আমার পক্ষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে জানতে পেরে আমি তাৎক্ষণিকভাবে মুঠোফোনে তাদের কল করে মিছিল বন্ধ করতে বলি এবং আমার অফিসে চলে আসতে নির্দেশ দিই। আসলে আমার নিকট আত্মীয় হাজী আবুল হোসেন গাছ কাটার জন্য আবেদন করেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম তিনি অনুমতি পেয়েছেন। সেই কারণেই শ্রমিক নিয়ে গাছগুলো কাটা হচ্ছিল। ইউএনও স্যারের নির্দেশে থানা পুলিশ বাধা দেয়ার পর থেকে গাছ কাটা বন্ধ রয়েছে।’ তবে বাড়ির মালিক হাজী আবুল হোসেন ভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, গাছগুলো পড়ে আমার বাড়ির ক্ষতি হতে পারে ভেবে আমি ইউএনও অফিসে লিখিত আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো অনুমতি পাইনি। পরে জানতে পারি আমার আত্মীয় রোকন লোকজন নিয়ে গাছ কাটছে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, রোববার রাতে ইউএনও স্যার আমাকে ফোন করে জানালে পুলিশ পাঠিয়ে কর্তনকৃত গাছের অংশ জব্দ করা হয়েছে। তবে মিছিল বা শো ডাউনের বিষয়টি আমার জানা নেই। ইউএনও স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, বিষয়টির জন্য ভূমি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমার কাছে একটি আবেদন করা হয়েছিলো তবে এখন পর্যন্ত কোনো গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি।
বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিজামুর রহমান নিজাম বলেন, আমাদের তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। তবে আমার জানামতে কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচি নেই। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে মিছিল করে থাকে তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
এফপি/রাজ