Dhaka, Monday | 8 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 8 September 2025 | English
নির্বাচনকালে তথ্যে প্রবাহে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া হবে না: মাহফুজ আলম
আ.লীগ নেতার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা, স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
এশিয়ার খেলাপি ঋণের শীর্ষে বাংলাদেশ, ব্যাংক খাত গভীর সংকটে
শিরোনাম:

সাতক্ষীরার একে একে বন্ধ হয়ে গেছে ১৩টি সিনেমা হল, ধুকছে লাবনী

প্রকাশ: রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম  (ভিজিটর : ৫৪)

সাতক্ষীরা জেলায় আগে ১৪টি সিনেমা হল ছিল। এর মধ্যে এখনো ধুকে ধুকে চলছে সাতক্ষীরার সবচেয়ে পুরাতন লাবনী সিনেমা হল। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে শ্যামনগরের লক্ষ্মী ও সুন্দরবন সিনেমা হল, কালিগঞ্জের জ্যাকি সিমেনা হল, দেবহাটার লাইট হাউজ ও ইছামতি ছিনেমা হল, কলারোয়ার জোনাকি ও পলাশ সিনেমা হল, আশাশুনির কুল্যার সোনালী সিনেমা হল, পাটকেলঘাটার চ্যালেঞ্জ ও মামুন সিনেমা হল এবং তালার ফাল্গুনী সিমেনা হল।

সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী লাবনী সিনেমা হলের ম্যানেজার জারদিসুর রহমান বলেন, শো’র সময় হলে সিনেমা হলের সামনে ভীড় পড়ে যেত। এতো দর্শককে জায়গা দেব কোথায় তা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়তাম। টিকিট না পেয়ে অনেকে ভাঙচুরও করতো। কিন্তু এখন মানুষ আর সিনেমা হলে আসে না। দু’ইজন পাঁচজনকে নিয়েও শো চালাতে হয়। এই একটি হলটিই এখনো টিকে আছে। বাকীগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট এসে সিনেমা হলের আর কদর নেই।
ফিতা ক্যাসেটের প্রচলন-ডিস লাইনের সম্প্রসারণ-ইন্টারনেটের বিস্তার ও স্মার্ট ফোনের সহজলভ্যতা- বিবর্তনের এই ধারা সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সিনেমা হল কেন্দ্রিক বিনোদনে। এছাড়া মানুষের ব্যস্ততাও বেড়েছে, আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত হয়নি দেশের সিনেমাও। তাই ক্রমেই দর্শক খরায় ভুগতে থাকা সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে একের পর এক। সেই সাথে সাতক্ষীরার রক্সি সিনেমা হল ও সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের সার্কাস প্যান্ডেলে বোমা হামলার ঘটনাও মানুষকে সিনেমা হল বিমুখ করতে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। এছাড়া সিনেমা হলগুলোর পরিবেশ ও অবকাঠামোগত ঘাটতি বর্তমান প্রজন্মকে সিনেমা হলমুখী করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে লাবনী সিনেমা হলের ম্যানেজার জারদিসুর রহমান বলেন, একটা সময় সিনেমা হল ছিল মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রধান উৎস। মানুষ তখন গ্রাম থেকে দল বেধে সিনেমা দেখতো আসতো। কিন্তু যখন ফিতা ক্যাসেটের প্রচলন হলো, তারপর ডিস লাইন পৌঁছালো ঘরে ঘরে, আর সবশেষ ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহার মানুষকে একেবারেই সিনেমাহল বিমুখ করেছে। এক স্মার্ট ফোনই ঘড়ি, টর্চলাইট ও সিনেমা হলের ব্যবসায় ধস নামিয়ে দিয়েছে। মানুষের এখন তিন ঘণ্টা এক জাগায় বসে সিনেমা দেখার সময় সুযোগ কিছুই নেই। একইভাবে যাত্রা সার্কাস পুতুল নাচও উঠে গেছে। ভারতীয় সিনেমা যেভাবে উন্নত হয়েছে, আমাদের তেমনটা হয়নি। সাতক্ষীরায় সর্বশেষ গত ঈদের পরে বন্ধ হয়ে গেছে সঙ্গীতা সিনেমা হল। তারও ১০-১২ বছর আগে রক্সি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। আর জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্যসব সিনেমা হলগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে এক দেড় দুই দশক আগে।

সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসফিকুর রহমান মিল্টন বলেন, ২০০২ সালে  সাতক্ষীরার রক্সি সিনেমা হল ও চলমান গুড়পুকুর মেলার সার্কাস প্যান্ডেলে এক সাথে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিপর্যয় দেখা দেয়। মানুষ ভয়ে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সিনেমা হলগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যায়।

শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য ১৯১৩ সালে তৎকালীন জমিদার প্রাণ নাথ রায় চৌধুরীর পারিবারিক আত্মীয় বিনয় কৃষ্ণ ঘোষ ২৯ শতক জমি দান করেছিলেন, যেখানে স্থাপিত হয় দরবার হল। এই দরবার হলে নিয়মিত নাট্য চর্চা ও প্রদর্শনী হতো। এরপর ষাটের দশকে দরবার হলে সিতারা টকিস নামে সপ্তাহে পাঁচদিন সিনেমা প্রদর্শনী শুরু করেন মোজাম্মেল হক নামে এক ব্যক্তি। বাকী দিনগুলোতে চলতো নাট্য প্রদর্শনী, মাঝে মাঝে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান। স্বাধীনতার পরে এসএম রুহুল আমিনের তত্ত্বাবধানে যাত্রা শুরু করে লাবনী সিনেমা হল। জেলার সবচেয়ে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী এই সিনেমা হলটি এখনো টিকে রয়েছে। তবে, হারিয়েছে জৌলুস।

সিনেমা হলটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখন পুরাতন একটি সিনেমার প্রদর্শনী চলছে। নাম ড্যাম কেয়ার। দর্শক পাঁচজন। হলটি টিকিয়ে রাখতে পাঁচজনকে নিয়েই শো চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দর্শকরা বয়োবৃদ্ধ, তাদের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের কেউ নেই।

ম্যানেজার জারদিসুর রহমান জানালেন, বর্তমান প্রজেন্মর কেউ এখন সিনেমা দেখতে আসে না। যারা বৃদ্ধ হয়ে গেছে, কোন কাজ নেই। তারা সময় কাটাতে আসে। আবার দুই একজন ভ্যানচালক, রিক্সা চালকও আসে।

তবে, এখনো ঈদ কিংবা কোন উৎসবের সময় হল ভরে যায় দর্শকে। কিন্তু দর্শকের এই চাপ থাকে মাত্র এক বা দুইদিন। পরে আবার যা তাই। এজন্য সিনেমা আনার যে খরচ, তা ওঠে না।

সাকিব খানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভালো সিনেমা আনতে অনেক খরচ হয়, আর সচারচার মানের সিনেমা আনতে দুই তিন হাজার টাকা হলেই হয়। মাঝে মাঝে তাও ওঠে না।

জারদিসুর রহমান বলেন, এমনিতেই মানুষ এখন হল বিমুখ। তার উপর পরিবেশ ভালো না করলে মানুষ এখানে কেন আসবে? কিন্তু পরিবেশ ভালো করার উদ্যোগ বা মূলধন ব্যয় করবে কে? এভাবেই যে কয়দিন যায়।

দরবার হল বা লাবনী হল ভেঙে সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট বানানোর স্বপ্ন দেখছেন সাতক্ষীরা জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের একটি পক্ষ। এর বিপরীতে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব করেছেন সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের লোকজন।

তাদের বক্তব্য, ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা ফ্রেন্ডস ড্রামেটিক ক্লাবের নাট্য চর্চাও একইভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বহুতল মার্কেট হয়েছে, কিন্তু ড্রামেটিক ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। সেখানে এখন আর নাটক হয় না, বসে জুয়ার আসর।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিনয় কৃষ্ণ ঘোষ দরবার হলের জায়গা দিয়েছিলেন থিয়েটার করার জন্য। সেখানে দীর্ঘসময় ধরে থিয়েটার হয়েছে, সিনেমা প্রদর্শনী হয়েছে, সারাদেশের নাট্য দল নিয়ে নাট্য প্রতিযোগিতা হয়েছে। নানা কারণে সবকিছু বন্ধ, এখন শুধু সিনেমা হলটি আছে। এটা ভেঙে মার্কেট করা হলে আর কখনো সিনেমা বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। কিছু মানুষের মার্কেটের দোকান বরাদ্দ কেন্দ্রিক বাণিজ্য হবে। তাই এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। যেখানে একটা পার্ট থিয়েটার, একটা পার্ট আবৃত্তি, একটা পার্ট নৃত্য, একটা পার্ট আধুনিক সিনে কমপ্লেক্স, একটা কমিউনিটি সেন্টারও হতে পারে। কারণ এখানে এগুলো হতো, রাজনৈতিক কর্মসূচিও হতো। এখানে মওলানা ভাসানী প্রোগ্রাম করেছেন, জিয়াউর রহমানও প্রোগ্রাম করেছেন। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স হলে সংস্কৃতি বিকাশে যেমন ভূমিকা রাখবে, তেমনি মানুষ আধুনিক ও উন্নত পরিবেশে বিনোদনের জায়গাও খুঁজে পাবে।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝