Dhaka, Tuesday | 9 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Tuesday | 9 September 2025 | English
প্রযুক্তি নির্ভর বন নজরদারিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ: পরিবেশ উপদেষ্টা
‘মাশরুম লাঞ্চ’ হত্যাকাণ্ড, এরিন প্যাটারসনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নির্বাচনকালে তথ্যে প্রবাহে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া হবে না: মাহফুজ আলম
আ.লীগ নেতার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা, স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
শিরোনাম:

কপালে জুলাইয়ের স্প্লিন্টার নিয়ে জাকসু নির্বাচনে লড়ছে ছাত্রদল কর্মী

প্রকাশ: রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:১৩ এএম  (ভিজিটর : ৬৬)


জুলাই আন্দোলনে (গণঅভ্যুত্থান) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল একটি যুগান্তকারী গণজাগরণ। আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী অংশ ছিল জাবি-এর শিক্ষার্থীরা। যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে, বলিষ্ঠভাবে যুক্ত করে নিজেদের। দেশের অন্যান্য স্থানে আন্দোলনে হামলার শিকার  শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ এবং ১৫ জুলাইকে কালরাত ঘোষণার মাধ্যমে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ছিল অনবদ্য।

২৪ এর ৭ জুলাই 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর ব্যানারে রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পালন করে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি।
এসময় আন্দোলনের গতি বাড়াতে, বাংলা ব্লকেড চলাকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথে প্রথম সাংস্কৃতিক আন্দোলনের শুরু করে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল কর্মী ও পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান। 

তার কণ্ঠে ৭ জুলাই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রথম বাজে 'কারার ওই লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল...গানটি‌। এরপর ৯ জুলাই থেকে শুরু হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার (টিএসসি) কর্তৃক আয়জিত পথনাটক, অভিনয়, গানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। নতুন করে গতি বাড়ে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের। যা ধারাবাহিক ভাবে পুরো আন্দোলন জুড়ে চলতে থাকে জাবি ক্যাম্পাসে। 

১৫ জুলাই সন্ধ্যায় (তৎকালীন) মুজিব হলের সামনে সাধারণ ছাত্রদের মিছিলে ছাত্রলীগের দেশীয় অস্ত্র সহ অতর্কিত হামলা ও দফায় দফায় সংঘর্ষে, ডান হাত ভেঙ্গে যায়  আবিদুর রহমানের। ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার অফিসের সামনে ভাঙ্গা হাত নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিলে, পুলিশের ছোড়া ৭টি  বুলেটের স্প্লিন্টার তার কপালে লাগে। তাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পাস মেডিকেলে নিলে, সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় আবিদুরকে। সেখানে অপারেশন করে ৫ টি স্প্লিন্টার বের করলেও দুটি থেকে যায় তার কপালে। ক্রিটিক্যাল পজিশনে থাকায় আজও বের করা সম্ভব হয়নি বুলেটের সেই দুটি স্প্লিন্টার।

আহত জুলাই যোদ্ধা আবিদুর, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও ন্যায্যতার দাবিতে, কপালে পুলিশের গুলির স্প্লিন্টার নিয়েই লড়ছেন আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( জাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচনে জাবি ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে থেকে, 'সাংস্কৃতিক সম্পাদক' পদে ৭ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। বর্তমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে আছে আবিদুর।

আদিবুর রহমান বলেন, 'আমাকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে, বিশ্বাসের জায়গা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আমার উপর বিশ্বাস রাখায় আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি'। 

'শিক্ষার্থীদের ন্যায্যতা আদায়ের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, এ আন্দোলন শেষ হয়নি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মাধ্যমে এ আন্দোলন চলমান থাকবে। ২৪ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ৭ জুলাই ঢাকা আরিচা মহাসড়কে  গানের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলাম'। 

'আমি মনে করি জাকসু নির্বাচনে কোন প্রার্থী যদি একটি ভোট ও পান, তিনি একজনের সম্পাদক। ইনক্লুসিভ সাংস্কৃতিক অঙ্গন উপহার দেওয়াই হবে আমার প্রথম ও অন্যতম প্রধান লক্ষ। আমি সকল সাংস্কৃতিক ও সহ-সাংস্কৃতিক পদপ্রার্থীকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। সবার আইডিয়া কাজে লাগাতে পারলে জাহাঙ্গীরনগরকে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক নগরীতে পরিণত করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। তাই সকল পদপ্রার্থীই যেন তার সর্বোচ্চটা দিতে পারেন এই লক্ষে সকলকে সাথে নিয়ে একটা সাব কমটি করে জাহাঙ্গীরনগরকে একটা আদর্শ সংস্কৃতি উপহার দিতে চাই'।

'আমাদের অডিটোরিয়াম, জন্মের পর থেকেই বঞ্চিত। একটি নাটের কাজও হয় নি। না আছে এসি না আছে ভ্যান্টিলেশন। একটা যুগোপযোগী অডিটোরিয়াম আমাদের প্রয়োজন। 

এছাড়াও সেলিম আলদিন মুক্তমঞ্চের সংস্কার প্রয়োজন। স্বৈরাচার পালালেও গনরুম পালায় নি। হ্যাঁ, বলছিলাম টিএসসির সংগঠনগুলোর কথা। একরুমে গাদা গাদা সংগঠন।  এর অবসান হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি'।

জুলাই আন্দোলনে তার সহযোদ্ধা আইন ও বিচার বিভাগের ৪৭ ব্যাচের ছাত্র সাজ্জাদ হোসাইন সৌভীক বলেন, 'জাকসু নির্বাচনে আবিদুর কে সাংস্কৃতিক পদে নির্বাচন করতে দেখে ভালো লাগছে। আবিদুরের মত এমন প্রতিবাদী ও বিপ্লবী মানুষকে জাকসুতে আসলেই দরকার। আজও সেই জুলাই আন্দোলনের কথাগুলো মনে পড়ছে আমার। যেখানে আবিদুরকে সম্মুখ সারিতে যোদ্ধা হিসেবে দেখেছিলাম। আবিদুর আমার হলের ছোট ভাই, ২৪ এর ১৫ জুলাই আমাদের মিছিলে ছাত্রলীগ যখন হামলা চালায়, তখন আবিদুরের হাতে আঘাত পায়। এরপর প্রশাসনের হল ভেগেন্টের সিদ্ধান্তে আমরা আবার যখন পুলিশের সাথে মুখোমুখি হই, তখনও দেখি সেই সম্মুখভাগে ভাঙ্গা হাত নিয়ে সেই আবিদুর। 

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেল, আমরা নির্মাণাধীন নতুন লাইব্রেরীর পাশে অবস্থান নিয়েছিলাম, অপরদিকে পুলিশ  মুরাদ চত্বর থেকে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিলো। হঠাৎ করে পুলিশ মুহুর্মুহু ছররা গুলি, টিয়ারসেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড মারতে থাকে। 

আমার চারপাশে সবাই দেখি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে দেখি আবিদুরকে একজন নিয়ে আসছে তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। তৎক্ষণায় তাকে রিকশায় করে ক্যাম্পাস মেডিকেলে নিয়ে যাই। যেতে যেতে ও আমাকে তখন একটি কথাই বলছিল, ভাই আমি যদি মরেও যাই তবুও আপনারা এই জালিমের পতন নিশ্চিত করেই ঘরে ফিইরেন। সেই বিপ্লবী এবং প্রতিবাদী আবিদুরের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল'।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ কেমন আশা করেন জানতে চাইলে আবিদুর রহমান বলেন,'দেশ এখন স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন, 'তাই স্বাধীন দেশে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে অনুষ্ঠিত হবে এমনটাই আশা করছি'। দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে আমার প্রিয় এ ক্যাম্পাস। তাই এখনো যে ২ টি বুলেট কপালে আটকে আছে আমার, তার যন্ত্রণাও আমাকে এখন শান্তি দেয়'।

বর্তমানে এই আহত জুলাই যোদ্ধা ছাত্রদলের কর্মী আবিদুর রহমানের ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে নিয়োমিত চিকিৎসা চলছে। মাঝে মাঝে স্বৈরাচার সরকারের পালিত বাহিনীর দেয়া বুলেটের দুঃসহ যন্ত্রণা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

এফপি/আরআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝