দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ধান ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ ছাড়াই ক্ষতিকর পোকা দমন ও ধ্বংস করার জন্য পার্চিং ব্যবস্থায় কৃষকরা সুফল পাওয়ায় এ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গত কয়েক বছরে অধিকাংশ কৃষক ধান ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য ক্ষেতে পার্চিং হিসাবে বাঁশের কঞ্চি ও ধৈঞ্চা গাছের চারা রোপণ করে আশানুররুপ সাফল্য পেয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলায় শতভাগ জমিতে জীবন্ত ধৈঞ্চা গাছের চারা রোপণ ও ডেড পার্চিং এর ব্যবস্থা করেছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ধানক্ষেতে চোখ বুলালেই জীবন্ত পার্চিং ধৈঞ্চা আর ডেড পার্চিং।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ পদ্ধতি অনুসরণকারী কৃষকদের মধ্যে বিরেন্দ্র রায়, রাজেন্দ্র নাথ রায়, খবিরুল, জুয়েল রানা, এমদাদুল, জালাল মিয়া, পরিমল চন্দ্র রায়সহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান, পার্চিং পদ্ধতি বোঝানোর সময় তারা বিশ্বাস করতে পারেনি। পরে এ পদ্ধতির গুনাগুন দেখে বিস্মিত হন। তারা এ বছর স্ব-উদ্যোগে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন হারে এ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। ফলে আর্থিক ক্ষতি, পরিবেশ ও বায়ু দূষণ এবং নানা ধরনের রোগবালাই থেকে নিজে ও জাতিকে রক্ষা করতে পেরেছেন।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা খাদিমুল ইসলাম, রত্নাকর রায়, শুভাশীষ অধিকারীসহ সকল উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা জমিতে পার্চিং স্থাপনে সাধারণ কৃষদের উদ্ভুদ্ধ করণ অব্যাহত রেখেছে। ফলে ডেড ও জীবন্ত পার্চিং পদ্ধতি চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, ধান ক্ষেতে সবুজের মাঝে ধৈঞ্চা গাছের হলুদ ফুলের সমারোহ প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য অনেক খানি বাড়িয়ে দেয়। ধৈঞ্চা গাছের হলুদ ফুল শুধু শোভা বর্ধনের জন্য নয় বরং হলুদ ফুলে আকৃষ্ট হয়ে উপকারী পোকা আসে ধান ক্ষেতে। এরা ক্ষতিকর পোকা ধ্বংস করে। এছাড়াও ধৈঞ্চ গাছে দিন ভর ফিঙ্গে, শালিক ও বুলবুলিসহ নানা ধরনের উপকারি পাখী বসার সুব্যবস্থার ফলে ক্ষতিকর পোকা দমন হয়।
পোকা দমনে হাজার হাজার টাকা খরচ করে নানা ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে হয় না ধান ক্ষেতে। এক দিকে যেমন কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি হয়, অন্যদিকে পরিবেশ ও বায়ুদূষণ হয়। তাই রোগ-বালাইর হাত থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট আফ্রিকান জাতের ধৈঞ্চার দ্বারা জীবন্ত পার্চিং পোকা দমনের সবচেয়ে সহজ উপায় এবং কম খরচে পরিবেশ বান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনায় কৃষকের জন্য সরবরাহ করে।
আফ্রিকান জাতের ধৈঞ্চার গাছের শিকর ও গোড়ার দিকে অসংখ্য নডিউল (গুটি) থাকে। এই নডিউলে নাইট্রোজেন জমা হয়। যা ইউরিয়া সারের কাজ করে। জীবন্ত পার্চিং এর মাধ্যমে বিশেষ করে ধানের মাজরা পোকা এবং পাতা মোড়ানো পোকা দমন হয়। কৃষকরা প্রতি বিঘায় (৫০ শতক) ৬টি ধৈঞ্চা গাছের চারা রোপন করে জীবন্ত পার্চিংয়ের মাধ্যমে ধানের ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা দমন করতে পারে এবং ধৈঞ্চা গাছের সবুজ পাতা থেকে জৈব সার ধান ক্ষেতের উর্বরতা বৃদ্ধি সহায়তা পেতে পারে এবং প্রতি বিঘায় ৮টি ডেড পার্চিং লাগাতে হয়। (ছবি আছে)
কৃষক রাজেন্দ্র নাথ রায় ও খবিরুল তাদের রোপা আমন খেতে ডেড পার্চিং লাগাচ্ছেন। ছবিটি উপজেলার খামার সাতনালা এলাকা থেকে নেয়া।
এফপি/রাজ