শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় বুড়িগোয়ালিনীতে পানির অভাবে ব্যাপক হারে চিংড়ি ও কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বেড়িবাঁধের ভেতরে বসানো ৯টি অবৈধ পাইপ অপসারণ করার পর থেকেই এ সংকট দেখা দিয়েছে। পাইপগুলো দিয়ে নিয়মিত নদী থেকে পানি এনে ঘেরগুলোতে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু পাইপ অপসারণের কারণে বর্তমানে ঘেরে নতুন পানি ঢোকানো সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় ঘের মালিকরা জনান, পাইপগুলো উপকুলের নদ-নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙার অন্যতম প্রধান কারণ। ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অবৈধ পাইপগুলো অপসারণের দির্দেশনা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর সেই নিদের্শনা বাস্তবায়নে এবার মাঠে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিকাশ মন্ডল বলেন পানির প্রবাহ বন্ধ থাকায় মৎস্যঘেরের ভেতরের পানি দ্রুত গরম হয়ে যাচ্ছে এবং অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এতে প্রতিদিন শত শত চিংড়ি ও কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এতে মৎস্য ও কাঁকড়া খাতে ব্যাপকহারে ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা। এদিকে হটাৎ পাইপ অপসারণে সংকটে পড়েছে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষিরা।
স্থানীয় ঘের মালিক মালেক, ছাত্তার, বাবু জানান, উপকূলীয় এলাকায় মাছ ও কাঁকড়া চাষই মানুষের প্রধান জীবিকা। কিন্তু হঠাৎ পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষিরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে অনেক চাষি ক্ষতির কারণে ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে দুর্গাবাটি এলাকার ঘের ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র বলেন, বেড়িবাঁধে পাইপ বসানো আইনত নিষিদ্ধ হলেও বিকল্প ব্যবস্থা না করে পাইপগুলো একসাথে তুলে ফেলায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান করি যাতে বিকল্প কোনো খাল, স্লুইসগেট বা বৈধ জলপ্রবাহের ব্যবস্থা করা হোক। নইলে উপকূলের হাজারো মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।
স্থানীয় কাঁকড়া ব্যবসায়ী অনাথ মন্ডল জানান, বুড়িগোয়ালিনীসহ আশপাশের এলাকায় ঘের নির্ভরশীল প্রায় কয়েক হাজার পরিবার রয়েছে। এভাবে পানি সংকট চলতে থাকলে মাছ ও কাঁকড়া উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরার উপকূল জুড়ে বেশ কিছু ফিশারির নির্মাণ করা স্লুইসগেট দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে পড়ে আছে, পড়ে থাকা কলগেট গুলো সংস্থার করা হলে মৎস্য চাষে কোন প্রকার পানির ঘাটতে হতো না।
মৎস্যচাষিরা জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ ও কাঁকড়া চাষ টিকিয়ে রাখতে পানি সরবরাহ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফিশারি প্রকল্পের কলগেটগুলো সংস্কার করা গেলে পানি প্রবাহ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙা হবে বলে তাদের আশা। ঘের মালিকরা জরুরি ভিত্তিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং দ্রুত বিকল্পভাবে পানি সরবরাহের রাস্তা তৈরির ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: রনি খাতুন জানান, স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে পাইপগুলো অপসারণ করা হয়েছে। যদি ঘের ব্যাবসায়িরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের বিকল্প ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এফপি/রাজ