Dhaka, Friday | 15 August 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 15 August 2025 | English
সাদাপাথর সাত দিনের মধ্যে আগের জায়গায় ফেলার নির্দেশ হাইকোর্টের
রূপসায় সাব্বির হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৪
জনগণের হাতে ক্ষমতা ফেরাতে ফেব্রুয়ারিতে অবাধ নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ১ মাস
শিরোনাম:

দুই সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন শহীদ মিজানুরের স্ত্রীর

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫৩ এএম  (ভিজিটর : ১২)

অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম শহীদ মো. মিজানুর রহমানের। জীবিকার সন্ধানে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই রাজধানীতে পাড়ি জমান তিনি। পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন আশুলিয়ার বাইপাইলের একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে। দীর্ঘদিন পোশাক শ্রমিকের কাজ করার পর তিনি ফুটপাতে জুতার ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা করে ভালোই চলছিল মিজানুরের সংসার। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে সিঙ্গাপুর পাঠাবেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে মিজানুরের পরিবারের। ৫ আগস্ট ‘পুলিশের গুলিতে শহীদ’ হন দুই সন্তানের বাবা ৩৭ বছর বয়সি এই যুবক। বাবাকে হারিয়ে শোকে পাথর ছেলে শুভ (১৪) ও মেয়ে মিমি (৭)। স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন স্ত্রী শেফালী বেগম।

শহীদ মো. মিজানুর রহমানের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের ভেলামারী গুচ্ছ গ্রামে। জায়গা-জমি না থাকায় মিজানুরের বাবা ওসমান গণি আশ্রয় নেন গুচ্ছ গ্রামে। অতিদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মিজানুর রহমান পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় ২২ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। এরপর তিনি শেফালী বেগমকে বিয়ে করেন। অর্থ সংকট কাটাতে তার স্ত্রী চার বছর আগে পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। মিজানুরের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে শুভ আশুলিয়ার বাইপাইলের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি এবং মেয়ে মিমি একটি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। মিজানুরের ওপর নির্ভরশীল ছিল অসুস্থ বাবা ওসমান গণি এবং বৃদ্ধা নানি এজি বেগম।

জানা গেছে, আশুলিয়া থানার পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন মিজানুর ও তার পরিবার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকালে আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। সেদিন ছাত্র-জনতাকে লক্ষ করে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। মানুষের চিৎকার-চ্যাঁচামেচি ও গোলাগুলির শব্দ শুনে মিজানুরের ছেলে শুভ বাসার ছাদে যায়। ছেলেকে বাসার ছাদ থেকে নামিয়ে আনতে যান মিজানুর। ছেলেকে নিয়ে ছাদ থেকে নামার সময় হঠাৎ পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে মিজানুরের তলপেটে। মুহূর্তেই ছাদের ওপর লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে আশপাশের লোকজন ধরাধরি করে মিজানুরকে বাড়ির নিচে নিয়ে আসেন। কিন্তু কোনো গাড়ি না পাওয়ায় সন্ধ্যার দিকে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে।

প্রথমে স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরে শ্যামলীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর মিজানুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেদিন রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরদিন ৬ আগস্ট সকালে পরিবারের সদস্যরা মিজানুরের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় গত বছর ঢাকার একটি আদালতে শহীদ মিজানুর রহমানের স্ত্রী শেফালী বেগম বাদী হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অশ্রুসিক্ত চোখে মিজানুরের ছেলে শুভ বলেন, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না আমার বাবা আর নেই। বাবার স্মৃতি বারবার চোখে ভাসে। বাবার কথা মনে হলে চোখের পানি থামাতে পারি না। মন চাচ্ছে বাবাকে বুকে জড়িয়ে শক্ত করে ধরে রাখি। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, স্বৈরাচারের একটি বুলেটে এতিম হয়ে গেছে আমার সন্তানরা। আমার সাজানো সংসারের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। তাকে হারিয়ে এখন দুই সন্তান নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি। সংসারের অবস্থা খুবই করুণ। বাইপাইলে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে কোনো রকমে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেঁচে আছি। সরকারের কাছে আবেদন, যারা আমার স্বামীকে গুলি করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বপ্রথম দুই লাখ টাকা প্রদান করেছে। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আর জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে চার লাখ টাকা দিয়েছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালোভাবে যেন বেঁচে থাকতে পারি, সেজন্য সবার সহযোগিতা চাই। সরকার যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে ছেলেমেয়ের সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ করে দিতে পারব।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝