Dhaka, Monday | 4 August 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 4 August 2025 | English
জয়পুরহাটে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু, ভ্যাকসিন না পাওয়ার অভিযোগ
শেখ হাসিনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার: অ্যাটর্নি জেনারেল
ছাত্রদল-এনসিপির সমাবেশ ঘিরে যান চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা
৫ আগস্টের আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে: মাহফুজ আলম
শিরোনাম:

পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চলছে অবৈধ স্পা

প্রকাশ: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ১০:১৯ পিএম  (ভিজিটর : ৭)

পুরো বাংলাদেশের জন্য পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন প্রথম সারির পর্যটন এলাকা। সেই হিসাবে পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে আসে লাখো পর্যটক। এই পর্যটকদেও জন্য কলাতলী জোনে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারমধ্যে স্পা অন্যতম বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। দেশের বাইরে স্পা’র একটি সুনাম থাকলেও পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রয়েছে তার উল্টোদিক। অনেকে মনে করছে এই পর্যটন নগরীতে যারা স্পা কাজের সাথে জড়িত তারা কেউ এই কাজের জন্য দক্ষ নয়। যারা স্পা কর্মী রয়েছে তারা কোন ধরণের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া স্পা চালাচ্ছে। 

কক্সবাজারের পর্যটন জোন কলাতলীর স্পা সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। যেখানে স্পার আড়ালে পতিতাবৃত্তি, পর্যটকদের ব্ল্যাকমেইলিং এবং ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বার বার অভিযানেও এই অপরাধ থামানো যাচ্ছে না বলে জানা যায়।

অন্যদিকে আরেকটি পৃথক অভিযানে কটেজ জোনের একটি অখ্যাত কটেজের গোপন আস্তানা থেকে ২১ জন নারী ও ১২ জন পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই পতিতাবৃত্তি, পর্যটকদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ে জড়িত বলে জানিয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ সেসময়। তৎকালিন সময়ে  ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ এক ব্রিফিংয়ে এই নিয়ে বিস্তারিত জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে তথ্য ছিলো বীচ ওয়ার্ল্ড-এ এক ভুয়া সাংবাদিকের একটি স্পা সেন্টারে অনৈতিক কর্মকান্ড চলছে। সেখানে অভিযানে চালিয়ে অনৈতিক কাজে জড়িত পাঁচজন নারীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানা যায়, কলাতলি হোটেল মোটেল জোনে প্রায় ৫০টির অধিক নামে বেনামে স্পা সেন্টার রয়েছে। সুগন্ধার পূর্ব পাশে সিলভিয়া রিসোর্টের দ্বিতীয় তলায় রেহেনা বেগমে ও মাজেদা আক্তারের যৌত মালিকানাধীন গোল্ডেন স্পা সেন্টার রয়েছে। সৈকত পাড়াবাসী ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যদের দাবি, রাস্তার উপর এইধরনের স্পা সেন্টার দেখতে আপত্তিকর।

কলাতলী সৈকত পাড়া কক্স অবকাশ হোটেলে প্রদীপ কান্তি কর্মকারের লাক্সারি থাই স্পা। জিনিয়া রিসোর্টে রয়েছে, বহু বিতর্কিত স্পা কর্মী মোছাম্মৎ রিতার মালিকানাধীন স্মার্ট থাই স্পা, হোটেল হোয়াইট বীচে স্পা কর্মী জুলি আক্তারের মালিকানাধিন এঞ্জ্যালা টাচ থাই স্পা, লেগুনা বীচ হোটেলে অবস্থিত, আল আমিনের নিউ সেভেন স্কাই থাই স্পা।

এছাড়া হোটেল ওয়াল্ড বীচে রিল্যেক্স থাই স্পা, এক সাথে রিয়ার ডিলাক্স থাই স্পা এখানে দুইটি রয়েছে। ডলফিন মোড়ের দক্ষিণ পাশে গ্রীণ রেস্টুরেন্টের উপরে এ্যরোমা থাই স্পা। শহরের সুগন্ধা প্রধান সড়কে পাশে আলভা ওয়েভ আবাসিক প্ল্যাটে চায়না রোজ স্পা, সাগর পাড়ে হোটেল সী প্রিন্সে, সী-প্রিন্সেস থাই স্পা, দেলোয়ার প্যারাডাইসে রয়েছে কুইন থাই স্পা। হোটেল সি ওয়েলকাম নিউ সেভেন ডোর থাই স্পা। এ ব্লক গণপূর্ত মাঠের পূর্ব পাশে রানী থাই স্পা, আলফা ওয়েভে থাই মেলোডি স্পা, হোটেল গ্রিন মেরিনা তে রয়েছে, জুলি আক্তারের মালিকানাধীন এঞ্জেল টাচ। বি ব্লক সুগন্ধা পয়েন্ট এ সানসেট বে স্পা সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী সালেহা বেগম, গ্লামার ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফারুক ও জেসমিন আক্তার, সুইডিশ থাই স্পার স্বত্বাধিকারী ইয়াছিন নুর, স্পা এশেন শিয়ার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নুরুল করিম, নিউ ডায়মন্ড থাই স্পার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সোহেল।

সচেতন মহল দাবি তুলছেন, বিভিন্ন প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এ সমস্থ স্পা কেন্দ্র গুলো বিভিন্ন গেস্ট হাউস ও অভিজাত হোটেলে মাসিক রুম ভাড়া নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। শরীর মাসাজের নামে যৌন উত্তেজক কলা কৌশলে সুন্দরী নারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা। ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেরা আর  কিছু পর্যটক এবং এনজিওতে কাজ করা কর্মকর্তারা মূলত এদের গ্রাহক। ফুল বডি ম্যাসেজ ঘন্টায় ২০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্য নির্ধারন আছে। প্রতিটি স্পা কেন্দ্রে রাখাইনসহ ১০/১৫ জন সুন্দরী নারী থাকে। সেখান থেকে যে কোন পছন্দ মত নারীকে নিয়ে ম্যাসেজ করাতে পারে গ্রাহকরা। সকাল ১০ টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এসব স্পা কেন্দ্রগুলো খোলা থাকে বলে জানান তারা।

এদিকে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করতে আর সামাজিক নৈতিকতাকে লুপ্ত করতে শুরু হয়েছে নতুন  ব্যবসা যার নাম স্পা। এই স্পা ব্যবসার আড়ালে যে হারে বেড়েছে যৌনতা ও দেহ ব্যবসা তার দিকে খেয়াল নেই অনেকরে এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। নিবন্ধন বিহীন আর উচ্চ মূল্যের এ ব্যবসার কোন আয়কর ও ভ্যাট দিচ্ছেনা ওসব ব্যবসায়ীরা। শুধু নাম মাত্র বৈধ ব্যবসার নাম দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে এ অসমাজিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কে পুঁজি করে দেশী বিদেশী পর্যটকদের ঘিরে গড়ে তুলেছে এ ম্যাসেজের নামে যৌনতা আর মুধু বিলাস। সরেজমিনে দেখা যায়, হোটেল মোটেল জোনের অলিতে গলিতে এ স্পা গুলোর বিজ্ঞাপনের প্লে কার্ড শোভা পাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, শহরের হোটেল মোটেল জোন এলাকায় শুধু তাদের এ ব্যবসা। পর্যটন কেন্দ্রীক এ ব্যবসায় সুন্দরী নারীদের দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুন্দরী নারীদের এনে আর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীরা এসব কাজে জড়িত বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। যদিও এগুলো পরিচালিত হচ্ছে নারীদের দিয়ে। কিন্তু পর্দার আড়ালে রয়েছে রাঘববোয়ালরা।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন আসিফ হাওলাদার জানান, জেলা প্রশাসন থেকে সিভিল সার্জন অফিসে এই বিষয়ে অবগত করা হয়নি। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করবো।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, অভিযোগের উপর ভিত্তি করে আমরা অভিযান পরিচালনা করে থাকি। লাইসেন্স এর বিষয়টি জেরা প্রষামন ও পৌর প্রশাসক দেখেন। বাকি বিষয় এসপি মহোদয় বলতে পারবেন।

কক্সবাজার পৌর প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ জানান, কতটি বিউটি পার্লার হিসাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে আমি এখনো জানি না। বিউটি পার্লাারের লাইসেন্স নিয়ে যদি স্পা সেবা দেওয়া হয় তবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেনে আপনাকে জানাতে পারবো। তিনি আরো বলেন যদি স্পার লাইসেন্স নিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  আমি বদলী হয়েছি আশা করছি যিনি দায়িত্ব নিবেন এই বিষয়ে কাজ করবেন।
   
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, স্পার আড়ালে নানা অপরাধ সংঘটিত করে অপরাধীরা পর্যটকদের হয়রানি করছে। অন্যদিকে নারী-পুরুষের সংঘবদ্ধ চক্র অনৈক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। এতে পর্যটন শিল্পের দুর্নাম হচ্ছে। উঠতি তরুণীদের দিয়ে বডি ম্যাসেজের নামে ভয়াবহ দেহ ব্যবসায় নেমেছে এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। স্পা থেরাপি সেন্টার নাম দিলেও কারো অনুমোদন নেই। স্পা মালিকের কাছে পৌরসভার একটি ট্রেড লাইসেন্স তাদের মূল সম্পদ।

তবে কক্সবাজার পৌরসভার থেকে জানা গেছে প্রথমে স্পা সেন্টার হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স দিলেও এখন অনেকেই  বিউটি পার্লার হিসাবে ট্রেড লাইসেন্স নিচ্ছে। এইসব অবৈধ স্পা সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সচেতন মহল দাবি তুলছেন।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝