Dhaka, Wednesday | 30 July 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 30 July 2025 | English
গভীর সংস্কার না হলে স্বৈরাচার আবার ফেরত আসবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে বাঁশখালী ইকোপার্ক
সারা দেশে ১১ দিনের ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি
বিশ্ব বাঘ দিবস আজ
শিরোনাম:

পানের দামে ধস, ধান চাষে ফিরছেন কৃষক

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫, ৫:৪৯ পিএম  (ভিজিটর : ৩৮)

এক সময়ের স্বপ্ন বুনে গড়া সবুজ পানের বরজ এখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস আর হতাশার প্রতীক। একসময় যেখানে পান চাষে ভাগ্য ফিরেছে অনেক বেকার যুবকের, আজ সেখানে দেখা দিয়েছে অন্ধকার। কৃষকের স্বপ্নভঙ্গের হৃদয়বিদারক চিত্র দেখা যাচ্ছে যশোরের কেশবপুর উপজেলার গ্রামেগঞ্জে।

বাংলাদেশে পান শুধুই একটি চিবানোর বস্তু নয় এটি এক আবেগ, সংস্কৃতির অংশ এবং বহু মানুষের জীবিকা। দেশে যেমন পান নিত্যনৈমিত্তিক খাদ্যাভ্যাসে জড়িয়ে আছে, তেমনি এর রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও কম নয়। বিশেষ করে যশোর অঞ্চলের উর্বর মাটি পান চাষের জন্য বরাবরই উপযোগী।

কয়েক মাস আগে যেখানে বড় পানের ৮০টি বা এক পোন বিক্রি হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, বর্তমানে তা ২০ থেকে ২৫ টাকায় নেমে এসেছে। ছোট পান যা আগে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হতো, এখন তা ৫-৮ (পোণ) টাকায় নামতে দেখা যাচ্ছে। এই অপ্রত্যাশিত মূল্যপতনে কেশবপুরের বহু পান চাষি এখন দিশেহারা।

আব্দুল সালাম, কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল গ্রামের একজন অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত পান চাষি। তাঁর পরিবার পানের আয়ে স্বচ্ছল জীবন কাটাচ্ছিলেন। ছেলে কলেজে, মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। সব মিলিয়ে ছিল স্বপ্নের সংসার। সম্প্রতি তিনি আর একটি নতুন বরজ তৈরি করেছেন, যার পেছনে ব্যাংক ঋণসহ নানাভাবে অর্থ ব্যয় করেছেন। এখন পান বিক্রির বাজার নেই, আয় নেই, কিন্তু ঋণের বোঝা মাথায়।

তিনি বলেন, আমি বাড়তি বরজ করেছি পানের দাম বাড়বে বলে। এখন ৮০ পিচ পান বেচি ২০ টাকায়! এভাবে চললে বরজ তো ভাঙতেই হবে। কয়েকদিন আগে পানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় প্রায় ২০ হাজার টাকার পান বাজার থেকে ফেরত নিয়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছি।

সাজ্জাদ গাজী, একই গ্রামের আরেক চাষি, প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে বরজ করেছেন। প্রথমদিকে কিছু লাভ হলেও এখন বাজারে পান উঠছে পানির দামে। অবশেষে তিনি বরজ ভেঙে ফেলে দিয়েছেন। সেই জমিতে এখন ধান চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, পান বিদেশে যেত, এখন তো যাচ্ছে না। যুদ্ধ, রাজনীতি আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সব মিলিয়ে আমরা শেষ।

এক সময়ে যশোরের পানের সুনাম ছিল বিদেশেও। চাষিদের মতে, বাজারে বড় একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেট কৃত্রিমভাবে দাম কমিয়ে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছে। পান চাষীরা সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে না পারায় তারা বাধ্য হচ্ছে নামমাত্র দামে পান বিক্রি করতে। পান শহরে গিয়ে তিন-চারগুন দামে বিক্রি হয়। অথচ লাভবান হচ্ছেন না উৎপাদক চাষী। একইসাথে রপ্তানি হ্রাস, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধ ও রপ্তানির নীতির জটিলতা সে সম্ভবনাকে থামিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়াও এর বড় কারণ। পান রপ্তানি থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। অথচ দেশের ভেতরেই কৃষককে পান বিক্রি করতে হচ্ছে লোকসানে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও।

কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১২২ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। তবে কতটি বরজ আছে বা মোট উৎপাদনের পরিমাণ কত সেসব সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের কাছে নেই।

যশোর জেলার কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিটিংয়ে আছি, পরে জানাচ্ছি। কিন্তু পরবর্তীতে ফোন ধরেননি, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তারও কোনও উত্তর দেননি।

যখন চাষি নিজ হাতে নিজের বরজ ভেঙে দেন, তখন সে শুধু নিজের শ্রমের মূল্যই ফেলে দেন না সাথে হারিয়ে যায় তাঁর স্বপ্নও। এমনই এক ঘটনায় দেখা গেছে, পানের বরজ ভেঙে ফেলার পর স্থানীয় অনেকেই সেখানে গিয়ে পড়ে থাকা পান কুড়াতে ব্যস্ত।

লিমন নামের একজন কলেজ ছাত্র জানান, পান চাষী পান বিক্রি করতে পারছে না, তাই বরজ ভেঙে ফেলছে। আমরা সেই ফেলে দেওয়া পান কুড়াচ্ছি। পান এখন এত সস্তা যে চাষী বিক্রি করে খরচই তুলতে পারছে না।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝