গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে টানা তৃতীয় দিনের মতো জেলাজুড়ে কারফিউ চলছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে পুরো শহরজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় কারফিউ আংশিক শিথিল করে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লোকজনকে বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ ফের বলবৎ থাকবে।
গত বুধবার (১৬ জুলাই) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরে পৌঁছালে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে।
এনসিপির গাড়িবহর গোপালগঞ্জে ঢোকার সময় পথে পথে বাধার সম্মুখীন হয়। সকালেই পুলিশ ও ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে এনসিপি নেতারা পৌর পার্কে সমাবেশ করতে গেলে সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়।
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। বিভিন্ন স্থানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর এবং গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংঘর্ষের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দায়ী করা হয়েছে। উল্লেখ্য, উভয় সংগঠনের কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৭), সোহেল মোল্লা (৪১) এবং ইমন তালুকদার (১৮)। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তারা গুলিবর্ষণের শিকার হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারফিউ আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়ানো হয়, যা চলবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সেনাবাহিনী, র্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে। তবে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।
আজ সকাল থেকেই জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রায় জনশূন্য। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, বিপণিবিতান ও হাটবাজার। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউ বাড়ানো বা শিথিল করার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ কামরুজ্জামানও একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এনসিপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দাবি করছে, এনসিপি একটি উসকানিমূলক কর্মসূচি নিয়েছিল, যা জনশান্তি বিঘ্ন করেছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনসিপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে, পাশাপাশি কিছু জায়গায় প্রতিবাদ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কারফিউ শিথিল হলেও গোপালগঞ্জে এখনো অস্বস্তিকর ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেও অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
এফপি/রাজ