বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় ধাপের শুল্ক আলোচনা শুরু হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে।
বুধবার দিবাগত রাতে (বাংলাদেশ সময়) এই আলোচনার প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তার সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও কপিরাইট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশ নেন।
প্রথম দিনের আলোচনায় গার্মেন্টস, কৃষিপণ্য, জ্বালানি এবং প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যের ওপর শুল্ক হার, রপ্তানি প্রণোদনা, রুলস অফ অরিজিন, এবং বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শ্রম অধিকার, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন এবং সরবরাহ চেইনের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর বিদ্যমান উচ্চ শুল্কহার (বর্তমানে গড় ১৫–৩৫%) কমানোর দাবি জানায়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক কাঠামো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আলোচনার প্রথম দিনটি ফলপ্রসূ ছিল। আলোচনা আজ বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়) আবার শুরু হবে এবং আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত চলবে।
চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, তারা কিছু দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করবে। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য ও বস্ত্রশিল্প ঝুঁকির মুখে পড়ে। প্রথম ধাপের আলোচনা জুন মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা সফল হলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ফিরে পেতে পারে। ব্যর্থ হলে রপ্তানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে এবং লক্ষাধিক কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০২৪ সালে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৮ বিলিয়নই ছিল বাংলাদেশের রপ্তানি। তৈরি পোশাক এই রপ্তানির সবচেয়ে বড় খাত।
চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে উভয় দেশ শুল্ক কাঠামো, বাজারে প্রবেশাধিকার, এবং টেকসই বাণিজ্য নীতির বিষয়গুলোতে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। আলোচনার শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হতে পারে।
এফপি/রাজ