জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য রাখছেন।
সূচনা বক্তব্য শুরুর আগে ট্রাইব্যুনালের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো কোনো স্বৈরাচারের জন্ম হয়নি। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোনো স্বৈরাচারকে মিথ্যার ওপর পিএইচডি করতে হলে তাকে শেখ হাসিনার কাছে শিখতে হবে। পৃথিবীর সব স্বৈরশাসকের যদি কোনো সমিতি করা হয়, শেখ হাসিনা হবেন তার সভাপতি। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে স্বৈরাচার ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা চাই। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল পৃথিবীর কোন স্বৈরাচারের কী পরিণতি হয়েছে, তা আদালতের সামনে তুলে ধরেন।
রোববার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শুনানি শুরু হয়। আজকের বিচারকাজ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহাম্মদ মোহিতুল হক।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এই মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। পাশাপাশি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্যও দিন ধার্য করা হয়। এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
গত ১ জুলাই এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি শেষ করেন প্রসিকিউশন। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ জুন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে জানানো হয়।
গত ১ জুন জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিন আদালতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম। যা সব গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।
এফপি/এমআই