Dhaka, Saturday | 20 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Saturday | 20 September 2025 | English
মানুষের অধিকার নিশ্চিত করাই প্রকৃত গণতন্ত্র : ড. মঈন খান
আমেরিকার সিকিউরিটি ডিভাইসের মাদারবোর্ড রপ্তানি করছে ওয়ালটন
নৌকা ভ্রমণে গিয়ে নিখোঁজ, দু’দিন পর নদীতে মিলল মরদেহ
আবাসন খাত রক্ষাই অর্থনীতির সুরক্ষা
শিরোনাম:

মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান, বনে পর্যটন স্পট

প্রকাশ: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম  (ভিজিটর : ১৫৫)

গত ২০ বছর আগেও বনায়নে ভরপুর ছিল কক্সবাজারের মেধাকচ্ছপিয়া এলাকা। যেখানে ছিল শত বছরের গর্জন গাছসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ, বন্য পশুর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। ২০০৪ সালে নামকরণ করা হয়েছে মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান। এই বনে আগের মতো বন্যপ্রাণী চোখে পড়ে না । বর্তমানে পর্যটকদের যাতায়াত থাকার কারণে হাতির পাল আর সেদিক দিয়ে আসতে পারছে না। অন্যদিকে পর্যটক বাড়াতে করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। পর্যটক যাতায়াতারে জন্য করা হয়েছে সড়ক।

গত বছর এই উদ্যানকে উন্নতকরনের বড় ধরণের বাজেট বরাদ্ধ দেওয়া হয়। সেই বাজেট নিয়ে বনে গড়ে উঠেছে নানা ধরণের কৃত্রিম লেক, শুরুতেই করা হয়েছে বিরাট আকারে গেইট,পর্যটকদের চলাচলের জন্য সড়ক, বসার স্থানসহ বেশ কিছু স্থাপনা। যার কারণে, হাতি চলাচলের করিড়োর হিসাবে পরিচিত জায়গাটি এখন আর বন নেই।

৯০ দশকে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে খুটাখালী পার হলেই চকরিয়ার আগে বাম ও ডান পাশে নজরে আসতো বড় বড় গাছ, গভীর জঙ্গল। আর সেই জঙ্গলে নির্ভয়ে বসবাস করতো বন্যপ্রাণী। তবে এখন আর সেই দৃশ্য নজরে আসবে না। সড়কের পাশে কিছু গর্জন গাছ নজরে আসলেও ভেতরে ভিন্ন চিত্র। সেখানে যেমন বেদখল হয়েছে তেমনি পর্যটনখাতে উন্নয়নের নামে কৃত্রিমভাবে সাজানো হয়েছে এলাকাটি। কক্সবাজারের চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। এজন্য তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেকসহ নানা অবকাঠামো। কৃত্রিম লেক তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এক কিলোমিটার লম্বা এই লেকের তীরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আড়াই হাজার গাছের চারা। আগামী বছর লেক আরও এক কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। তৈরি করা হবে ঝুলন্ত সেতু। দুই পাড়ে থাকবে একাধিক বিশ্রামাগার। 
গেল বিশ্ব পর্যটন দিবসে খুলে দেয়া হয় এই লেক। কক্সবাজার জেলার সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই লেক খনন করেছে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ। লেক খনন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাশ। তবে এর আগেও ২০১৮ সালে এই উদ্যানে করা হয়েছিল কয়েক কিলোমিটার এলাকা নিয়ে জাতীয় উদ্যানে ট্রি  এডভেঞ্চার। এটির তেমন আলোর মুখ দেখা যায়নি। পর্যকদের তেমন আকৃষ্ট করা যায়নি।

প্রকৃতির অপার লীলাভূমি এই জাতীয় উদ্যানটি। শত বছরের পুরোনো গাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়দের মতে, কয়েকশত বছর আগের এই বাগান। বেশ ক’বছর আগেও আরো ঘন ছিল। তবে এখন আর আগের মতো নেই। এখন বসবাসের জন্য ঘর হয়েছে সেখানে। নিচের জমিগুলোতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। যার ফলে সেই ঘন জঙ্গল এখন আর নেই। ঘন জঙ্গল না থাকার কারণে জীবজন্তু দেখা যায় না। একসময় এই পথ দিয়ে হাঁটা যেত না হাতির জন্য। এখন সেই হাতি বিলুপ্তির পথে।

পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসার পথে চকরিয়া পার হলেই দু’পাশে সারি সারি গাছ আর ঘন জঙ্গল মাঝখানে কক্সবাজার চট্টগ্রাম সড়ক। সেই দৃশ্য গাড়ি থেকে নজরে আসলে পর্যটকদের চোখ আটকে যায় অপরূপ দৃশ্যে। দু’পাশে ঘন জঙ্গল মাঝখানে সরু রাস্তা। আর সেই রাস্তা দিয়ে কক্সবাজার আসার পথে পড়ে ২০০৪ সালে ঘোষিত ৩৯৫ হেক্টরে করা হয়েছে জাতীয় উদ্যান।

সবুজে ঘেরা অরণ্য, শত বছরের ইতিহাসের সাক্ষী গর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার থানার খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়ার কয়েক কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে জাতীয় উদ্যানটি। ২০১৮ সালে তৎকালিন কক্সবাজার উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদ পর্যটকদের বিনোদনের জন্য গড়ে তুলেছিলেন ট্রি এডভেঞ্চার। পর্যটকদের এডভেঞ্চারের জন্য করা হয়েছিল রশি দিয়ে এক গাছ থেকে অপর গাছে যাওয়ার ব্যবস্থা। পর্যটকরা যেন রাত্রি যাপন করতে পারে তার জন্য সরকারিভাবে রাখা হয়েছিল তাবুক। ২০১৯ সালে তৎকালিন বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন উদ্বোধনের পর। তবে এখন আর সেগুলো নেই। সে সময়ে করা ট্রি এডভেঞ্চারের জন্য যেসব কাজ করা হয়েছিল তা বর্তমানে সেখানে দেখা যায় না। এসব বিষয়ে বর্তমান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অবগত নন বলেও জানান। নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে কক্সবাজারের মেধাকচ্ছপিযার জাতীয় উদ্যানকে। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুটাখালীর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার জাতীয় উদ্যানকে সাজাতে সরকার বাজেট পরিকল্পনা করেছে। পর্যটকরা যেন সেখানে এসে সময় কাটাতে পারে সেদিকে খেয়াল রেখে তৈরি করা হচ্ছে জাতীয় উদ্যান। যেখানে থাকবে, প্রাকৃতিক ডিজাইনের আরসিসি বেঞ্জ, ডাস্টবিন, পর্যটকদের চলাচল সুন্দর রাখতে এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ, পর্যটকরা যেন বসতে পারে তার জন্য তৈরি হবে গোলাকার বেঞ্জ, প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে করা হবে প্রাকৃতিক লেক, লেকে থাকবে পর্যটকদের জন্য বোট, আরসিসি পিলারের মাধ্যমে তৈরি হবে ছাতা, ওয়াশরুম গাড়ি পার্কিংসহ বেশ কিছু সুবিধা। তবে তার জন্য নিতে হবে টিকেট। নির্ধারণ করা হবে প্রবেশ ফি। কবে এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় উদ্যানে এখন অবৈধ দখলদার বেশি রয়েছে। সামনের সারিতে কিছু গাছ থাকলেও ভিতরে শতভছরের গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। অবৈধ দখলদাররা করেছে ঘর।

স্থানীয় শফিউল আলম জানান, একসময় এখানে গভীর জঙ্গল ছিল। গর্জন গাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আমরা দেখেছি। এখন তা আর নেই। এখন বনবিভাগ সেখানে লেক করেছে। বাড়িঘর হয়েছে। সবমিলিয়ে এখন আর বন নেই আগের মতো।

জানা গেছে, দৃষ্টিনন্দন এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই লেক পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে যদি সঠিকভাবে প্রচারণার মাধ্যমে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অবগত করা হয়। লেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবস্থান। উত্তর পাশে গর্জন বনের ভেতরে রয়েছে হেঁটে বেড়ানোর পথ ও ‘ট্রি অ্যাডভেঞ্চার’ এর ব্যবস্থা। এই বছর লেক আরও এক কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানা যায়। এপাড়-ওপাড় যাতায়াতে লেকের ওপর তৈরি করা হবে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু ও একাধিক বিশ্রামাগার। লেকের পানিতে ভ্রমণের জন্য নামানো হবে প্যাডল নৌকা। প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি  লেকেরপাড়ে পর্যটকের বসার জন্য বেঞ্চ, কিটকট (চেয়ার ছাতা) বসানো হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য বসানো হয়েছে একাধিক ডাস্টবিন।

সকাল, দুপুর ও বিকেলে নির্জন লেকের পাড়ে বসে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে পর্যটকরা। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে শুনতে বন্য প্রাণী দেখারও সুযোগ রয়েছে। শতবর্ষী গর্জন গাছে ছাওয়া বনাঞ্চলের গভীর প্রশান্তিময় সৌন্দর্য পর্যটকদের প্রকৃতির আরও কাছে নিয়ে যাবে। এই বনে গাছে ওঠার জন্য একাধিক সিঁড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে ট্রি অ্যাডভেঞ্চারও। এ ছাড়া গভীর বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে হাঁটাপথ। এই পথের মুখেই ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি ফটক। ফটকের দুই পাশে রয়েছে দুটি হাতির ভাস্কর্য।

৩৯৫ দশমিক ৯২ হেক্টর আয়তনের মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানকে (ন্যাশনাল পার্ক) দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। উদ্যানের ভেতরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী আট হাজারের বেশি গর্জন গাছ। বন বিভাগের দাবি, এই অরণ্যেই দেশের প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা। বন বিভাগের সহযোগিতায় ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ট্রি অ্যাডভেঞ্চার চালু হয় আর্জাতিক সংস্থা ইউএসএআইডির ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্পের অধীনে।

মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে বেড়াতে এলে পাশের ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কও ঘুরে যেতে পারেন পর্যটকরা। ২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি ২ হাজার ২৫০ একর বনাঞ্চলে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম এই সাফারি পার্ক। বর্তমানে পার্কের বিভিন্ন বেষ্টনীতে আছে সিংহ, বাঘ, জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, ভালুক, হরিণ, শকুন, কচ্ছপ, রাজ ধনেশ, কাক ধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙ্গিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানি বক, বনমোরগসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১ প্রাণী।

উদ্যানে ঘুরতে আসা পর্যটক দম্পতি জমির চৌধুরী ও লিলি চৌধুরী বলেন, এই পার্ক কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের জন্য অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে, যদি এর সঠিক দেখাশোনা করা যায়। পার্কের কৃত্রিম হ্রদ ও বড় বড় গাছগুলো আসলে মুগ্ধ করার মতোই।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) রাশিক আহসান জানান, লেকের কাজ শেষ হয়েছে। পর্যটকরা ইকোট্যুরিজমের একটি ফ্লেভার পাবেন। এখন প্রতিদিন শতাধিক পর্যটক পার্কে আসেন। যারা ডুলাহাজারা পার্কে আসেন, তাদের অনেকে এখানে ছুটে আসেন। 

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, লেকের আশপাশে শত শত গর্জনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ ছোঁয়া ঢাকিজাম, ভাদি, তেলসুর ও চাপালিশ গাছ। উদ্যানে রয়েছে মেছো বাঘ, হাতি, বানর, উল্টো লেজ বানর, বনবিড়াল, বনমোরগ, শুশুক, ইগল, সবুজ ঠোঁট ফিঙে, চিল, শ্যামা, গুইসাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। এই উন্নয়নে  সাধারণ মানুষের জন্য করা হয়েছে বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য করা। যদি এই উন্নয়নে কোন প্রকার বনে এপেক্ট পড়ে এমন অভিযোগ পেলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো ।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝