কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ আশপাশের মানুষ। এতে করে চরম দুর্বীসহ হয়ে পড়েছে জনজবীন। এছাড়া আশাশুনি শ্যমনগর কালিগঞ্জ দেবহাটা উপজেলায় অনেক মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে বীজতলা ফসলি জমির।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, ১ জুলাই থেকে ৮ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতর আগামী কয়েকদিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
এদিকে একটানা বৃষ্টির জলাবদ্ধতায় ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা, ডুবে গেছে টিউবওয়েল, পানি উঠেছে বাড়িঘরে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ।
স্থানীয় এলাবাসির সাথে কথা বলে জানান যায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে যত্রতত্র মৎস্য ঘের গড়ে তোলায় বিগত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় ছয় থেকে আট মাস পানিতে হাবুডুবু খায় মানুষ। বাৎসরিক অবধারিত দুর্যোগে পরিণত হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে দেখা যায় না।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমোল্লারডাঙি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, মুনজিতপুরের রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার নিম্ন এলাকাগুলোয় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় বসতবাড়ি, রান্নাঘর ও গোয়ালঘরে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। জলাবদ্ধতা কবলিত এলাকার মানুষ ককশিটের ভেলা তৈরি করে যাতায়াত করছে। বিপাকে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা শাহিনুর রহমান জানান, টানা বৃষ্টিতে তাদের গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ইটাগাছার বিলে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের করার কারণেই এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
মাছখোলা গ্রামের শিক্ষক আমিনুর রহমান জানান, বৃষ্টিতে তাদের এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। ডুবে গেছে সবজি ক্ষেত।
কুখরালি আমতলার শেখ মাসুদ হোসেন জানান, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কুখরালী উত্তরপাড়ার প্রধান রাস্তাটির দু’পাশের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহরের ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, কুখরালী ও বাঁকাল বারুইপাড়া এলাকার পানি আসে যে বিলে, সেই বিলের পানি বেরোনোর পথ বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ঘের মালিকরা। যার কারনে প্রতিবছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার বেশ কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উপজেলার বাজেট থেকে ৫০ কিলোমিটার সেচনালা ও খাল সংস্কার করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট। বেতনা নদী খনন চলমান রয়েছে। পারশাল্যে ও কুঞ্জোডাঙির স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হবে। শহরের উপর দিয়ে প্রবাহমান প্রাণসায়ের খালে পৌরসভার পানি ফেলতে পারলে জলাবদ্ধতা কমে যাবে। এছাড়া ঘের মালিকদের পানি নিষ্কাশনের পথ উন্মুক্ত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এফপি/রাজ