কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে তিন কন্যা সন্তানের জননী শারমিন আক্তার শিলা নামে এক বিধবাকে স্বামীর ভিটা থেকে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যু স্বামী মাসুদ ইসলামের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও বাড়ি নিয়ে এখন তিনি নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
শারমিন আক্তার জানান, ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মাসুদ ইসলামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। ২০২২ সালের ১০ জুলাই কোরবানির ঈদের দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার স্বামী মাসুদ ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। স্বামী মৃত্যুকালে পৈতৃক সম্পত্তি, দোকানঘর ও একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার দায়িত্ব রেখে যান। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির সামান্য আয় দিয়েই কোনরকমে তিন কন্যা সন্তান নিয়ে তার সংসার চালিয়ে যান।
মাসুদের মৃত্যুর পরপরই তার পরিবারের আচরণে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা দেয়। শারমিনের অভিযোগ অনুযায়ী- স্বামীর ভাই রিপন ইসলাম (বর্তমানে ইতালিতে প্রবাসী), ভাসুর রিপনের স্ত্রী লিমা বেগম, ননদ লাভলী, মিনা, লাইলী, চাচাশ্বশুর শাহ আলম এবং চাচাশশুরের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (সৌদি প্রবাসি) তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
শারমিন আক্তার শিলা বলেন, “আমার বসতঘরের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। আমার থাকার ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। এমনকি এক পর্যায়ে আমার ঘরে তালা দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়।
তিনি আরও জানান, রিপন ইসলাম আমার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। আমি স্পষ্টভাবে তা প্রত্যাখ্যান করি। তারপর থেকেই তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। কুমিল্লা শহরের প্রভাবশালী গুন্ডা ও স্থানীয়ভাবে গুন্ডা ভাড়া করে আমাকে ও আমার সন্তানদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। কয়েকবার ৯৯৯-এ ফোন করে আত্মরক্ষা করি। প্রশাসনের কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে ভাশুর রিপনের বিরুদ্ধে।
শারমিন আক্তার আরও বলেন, “আমি থানায় অভিযোগ করলে কয়েকবার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। আমার ভাসুর রিপন প্রভাবশালী হওয়ায় তাদেরকে প্রভাবিত করে ফেলে, ফলে থানার মাধ্যমে ন্যায্য বিচার পাইনি।”
স্থানীয় সালিশ ও স্থানীয়ভাবে তিনবার মেম্বার ও চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে গ্রাম্য বিচার বসানো হয়। তবে অভিযুক্তদের প্রভাব ও অস্বীকৃতির কারণে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
খোশবাস ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আয়েত আলী বলেন, “বিষয়টি আমরা অবগত। রিপন বিদেশ হতে দেশে এসেছিলো। আমরা তিনবার সালিশিতে বসার আহ্বান রাখি কিন্তু রিপন ও শাশুড়ী এবং বোনেরা সামাজিক বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানায় আমাদের সমাধান সম্ভব হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার
বর্তমানে রিপন ইসলাম সামাজিক মাধ্যমে লাইভে এসে শারমিন আক্তারের নামে মিথ্যা অপবাদ, গালিগালাজ ও চরিত্রহননের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সমাজে তার সম্মানহানির পাশাপাশি সন্তানদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
শারমিন আক্তার সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়ে বলেন, “আমার সন্তানরা স্কুলে যেতে পারছে না। তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এখন আমি ও আমার মেয়েরা জীবন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি সরকার এবং রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করছি— যেন আমি আমার এতিম বাচ্চাদের নিয়ে স্বামীর ভিটার মধ্যে সম্মান এর সাথে থাকতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং আমি ও আমার এতিম বাচ্চাদের উপর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
এফপি/এমআই