মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়। সোমবার (২৩ জুন) রাতে কাতারের রাজধানী দোহায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরান সরাসরি স্বীকার করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন সেন্টার অবস্থিত।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, ইরান ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করেছে, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রয়টার্স জানায়, দোহার বেশ কিছু এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই কাতার সরকার সাময়িকভাবে তাদের আকাশপথ বন্ধ ঘোষণা করে। রাজধানী দোহার মার্কিন ও ব্রিটিশ দূতাবাস তাদের নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মঙ্গলবার কাতারের বেশ কিছু স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরান দাবি করেছে, এই হামলা তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন অভিযানের জবাবে চালানো হয়েছে। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি অভিযানে ইরানের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ তেহরানের। এরপরই ইরানের সামরিক বাহিনী কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে “বৈধ লক্ষ্যবস্তু” হিসেবে চিহ্নিত করে।
ইরান জানিয়েছে, এই হামলা ছিল “সুনির্দিষ্ট ও সীমিত প্রতিশোধ"। তাদের ভাষায়, "এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে প্রতিক্রিয়া অবশ্যই জানাবো।”
হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন হামলার আশঙ্কায় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল। মার্কিন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সৌদি আরব, ফ্রান্স, এবং ইউএই সহ একাধিক দেশ দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে ইরাকেও মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার খবর মিলেছে, তবে বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কয়েকটি ঘাঁটিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার এই সর্বশেষ পর্ব কৌশলগত প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত দিলেও, অঞ্চলজুড়ে বড় ধরণের সংঘর্ষের শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে- এই পাল্টা হামলা কি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে, নাকি সীমিত প্রতিক্রিয়া হয়েই থেমে যাবে?
এই বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত বার্তা নেই। তবে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সেনারা আপাতত সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
এফপি/রাজ