মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সাড়ে তিন বছরের সেই প্রতিবন্ধী শিশু (সেরেব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত) গোপাল সাঁওতালের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। শিশু গোপালের বাড়িতে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য সুবর্ণ নাগরিক কার্ড নিয়ে গেলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন।
সোমবার (১৬ জুন) বিকেলে কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মুরইছড়া চা বাগানের বাসিন্দা অনিল সাঁওতাল ও সনচড়িয়া সাঁওতালের একমাত্র শিশু সন্তান গোপাল সাওতালকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে এক দিনের মধ্যে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের ব্যবস্থা করে সেটি প্রদান করেন ইউএনও মো. মহিউদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার প্রানেশ চন্দ্র বর্মা, কর্মধা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ, ইউপি সদস্য সিলভেস্টার পাটাং, ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন এবং কুলাউড়ার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেন। রবিবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রানেশ চন্দ্র বর্মা শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে নিয়ে আসেন এবং সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেন।
শিশু গোপাল সাঁওতালের বাবা অনিল সাঁওতাল ও মা সনচড়িয়া সাঁওতাল জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “এত দিন কেউ পাশে দাঁড়ায়নি, এখন মনে হচ্ছে আমাদের সন্তান বাঁচার একটি সুযোগ পাবে।” আমাদের সন্তানের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনসহ অনেকেই সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সবার সহযোগিতায় যেন আমাদের সন্তান সুস্থ হয়ে উঠে।
এদিকে শিশু গোপালকে নিয়ে প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন সাপ্তাহিক “সীমান্তের ডাক”- এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, এখন থেকে নিয়মিত ভিত্তিতে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্ত হবে শিশুটি। এছাড়া শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে পরিবারটিকে সার্বিক ব্যবস্থার কথা জানানো হয়। শীঘ্রই জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ প্রদান এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। শিশু গোপালের চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর রাখা হবে।
তিনি আরো বলেন, শিশুটির জন্মনিবন্ধন এবং মায়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় প্রথমে কিছু জটিলতা থাকলেও দ্রুততার সঙ্গে তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সমাধান করা হয়।
প্রসঙ্গত, কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মুরইছড়া চা বাগানের শ্রমিক অনিল সাঁওতাল ও গৃহিণী সনচড়িয়া সাঁওতালের একমাত্র সন্তান গোপাল জন্ম থেকেই (সেরেব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত) ও শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে কোনো চিকিৎসা না পেয়ে, মাটিতে আড়াই ফুট গভীর গর্ত করে সেখানে গোপালকে দাঁড় করিয়ে রাখেন মা। তার কান্না থামাতে ও খাবার খাওয়াতে এভাবে সন্তানকে রাখতে বাধ্য হন তিনি। একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরে দিনাতিপাত করা পরিবারটির পক্ষে সন্তানের চিকিৎসা খরচ চালানো অসম্ভব। তবু মা-বাবার স্বপ্ন—একদিন গোপাল যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, অন্য শিশুদের মতো চলাফেরা করতে পারে।
এফপি/রাজ