জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা অচলাবস্থা এখনো কাটেনি। ২৫০ শয্যার এই বিশেষায়িত হাসপাতাল কার্যত ফাঁকা, ভর্তি আছেন শুধু জুলাই অভ্যুত্থানে আহত কয়েকজন ব্যক্তি। ঈদের ছুটির আগে সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি আহতদের ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করলেও তাঁরা হাসপাতাল ছাড়েননি।
২৮ মে আহতদের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের পর থেকেই হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম থমকে গেছে। ঘটনার পরপরই সব ধরনের ভর্তি ও অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে যায়। বহু রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। এরপর হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী ছুটিতে চলে যান।
ঈদের আগের দিন থেকে সীমিত আকারে জরুরি বিভাগ চালু রাখা হয়। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন মাত্র তিনজন আহত ব্যক্তি। অপারেশন থিয়েটার এখনো বন্ধ। সাধারণ রোগী বা অন্য কোনো নতুন রোগী ভর্তি হননি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩ জুন একটি চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাক আহাম্মদ। বাকি সদস্যরা এসেছিলেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল থেকে।
কমিটি ৪ জুন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৫৪ জন আহত ব্যক্তির মধ্যে ৩০ জনের চোখ পরীক্ষা করে। পরীক্ষা শেষে কমিটি জানায়, চিকিৎসা সন্তোষজনক, এবং আহতদের আপাতত ছাড়পত্র দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া যায়। গুরুতর রোগীদের জন্য সামরিক হাসপাতাল বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে রেফার করার পরামর্শও দেওয়া হয়।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেউই ছাড়পত্র নিয়ে যাননি। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঈদের ছুটি শেষে তাঁরা আবার দলে দলে ফিরে আসতে পারেন। এতে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফের শুরু করা কঠিন হয়ে উঠবে।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও নার্স বলেছেন, প্রায় ১০ মাস ধরে সাধারণ রোগীদের তুলনায় আহতদের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মনোযোগ বেশি ছিল। সংঘর্ষের ঘটনার পর উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এখন কর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও অনীহা কাজ করছে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. জানে আলম মৃধা বলেন, “আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নিয়েছি। আগামী শনিবার থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে সেবা চালুর পরিকল্পনা আছে।”
তবে বাস্তবতা হলো, যদি আহতরা ছাড়পত্র না নিয়ে হাসপাতালে থেকে যান এবং নতুন রোগীদের ভর্তি না হতে দেন, তাহলে ইনস্টিটিউটের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করাও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
এই অচলাবস্থার ফলে দেশের সবচেয়ে বড় চক্ষু হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসা কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে। সাধারণ রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এবং পুরো ব্যবস্থাপনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এফপি/রাজ