ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে স্মরণকালের ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহরের বিখ্যাত বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে বিধ্বস্ত হয়।
দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় পুলিশ। এ ছাড়া ছাত্রাবাসের ভেতরে থাকা কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থীও প্রাণ হারিয়েছেন। উদ্ধার কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে ২০০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গুজরাট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী জানিয়েছেন, “মোট প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ২৯৪। এর মধ্যে বিমানযাত্রী ছাড়াও মেডিকেল কলেজের বহু শিক্ষার্থী রয়েছেন।”
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে আগুন ধরে যায় এবং বিমানটি সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বিমানের লেজের অংশ এখনো একটি ভবনের ছাদে পড়ে রয়েছে।
দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক, বিষ্বাশ কুমার রমেশ। তিনি বিমানের জরুরি বহির্গমন দরজার পাশে ১১-এ আসনে বসে ছিলেন। পুলিশ বলছে, এ কারণেই হয়তো তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিও নিহত হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে রাজ্য প্রশাসন।
বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, বিমানটির উড্ডয়নের সময় ল্যান্ডিং গিয়ার ওঠেনি এবং টাওয়ারে “মেডে” কল পাঠানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এয়ার ইন্ডিয়া, বোয়িং, জিই এয়ারোস্পেস, ভারতের ডিজিসিএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এনটিএসবি যৌথভাবে দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতদের শনাক্তে যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই ক্ষতি অপূরণীয়। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা।”
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের ইতিহাসে এটিই প্রথম বড় ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। ২০১০ সালে মণাগালুরুতে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৮ জন নিহত হয়েছিলেন। তবে এবারকার দুর্ঘটনার আকার ও প্রাণহানির মাত্রা তুলনাহীনভাবে বড়।
বিস্ফোরণের অভিঘাতে ছাত্রাবাসের একাধিক ভবন ধসে পড়েছে। ঘটনাস্থলে এখনো উদ্ধার তৎপরতা চলছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
এফপি/রাজ