ইসরায়েলের চালানো এক বড় ধরনের বিমান হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)-এর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় ভোরে তেহরানে আইআরজিসির প্রধান দফতরে এই হামলা হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এবং আইআরজিসি কর্তৃপক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই হামলায় আরও নিহত হয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি এবং দুই শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী ফেরেয়দুন আব্বাসি ও মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চি। হামলার দায় স্বীকার করে ইসরায়েল জানিয়েছে, এটি তাদের “অপারেশন রাইজিং লায়ন” নামের একটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের প্রথম ধাপ। অভিযানের মূল লক্ষ্য- ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের ডজনখানেক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় সফলভাবে আঘাত হেনেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রায় ১০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে। তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আইআরজিসি’র তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “আমাদের কমান্ডার, যুদ্ধের নায়ক এবং বিপ্লবের রক্ষক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি শহীদ হয়েছেন। আমরা তার রক্তের বদলা নেব।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
হোসেইন সালামি ২০১৯ সাল থেকে আইআরজিসি প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘ চার দশকের সামরিক ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় তার নাম দীর্ঘদিন ধরে ছিল, বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচিতে ভূমিকার জন্য।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই এই হামলাকে “ইসরায়েলের আত্মঘাতী পদক্ষেপ” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে- এই হামলায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পথে যাচ্ছে। একইসঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার ভবিষ্যত এখন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ কি এখন সময়ের ব্যাপার? এমন প্রশ্ন এখন উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে তা কতটা কার্যকর হবে, সেটি নির্ভর করছে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েলের কার্যক্রমের ওপর।
এফপি/রাজ