ঈদ আমাদের জাতীয় জীবনে আনন্দ ও পুনর্মিলনের এক পবিত্র উপলক্ষ। কর্মব্যস্ত মানুষরা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে গ্রামের বাড়ির পথে রওনা দেন। কিন্তু প্রতি বছর ঈদ সামনে এলেই বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়।
অধিকাংশ পরিবহন কোম্পানি যাত্রীদের দুর্বলতা ও নিরুপায় অবস্থাকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকে। যেন এটি তাদের অলিখিত একটি ‘ঈদকালীন ব্যবসা নীতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জয়পুরহাট থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন বাস কোম্পানি— বিশেষ করে হানিফ, শ্যামলী, এসআর ট্রাভেলস অরিন, এস আই, শাহফতেআলী সহ ঢাকাগামী বাসগুলো নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি টাকা আদায় করতে থাকে। কোথাও ৬০০ টাকার জায়গায় আদায় করা হয় ১২০০ টাকা পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এবার ঘটেছে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। জয়পুরহাট সেনা ক্যাম্পের উদ্যোগে গত দুই দিন ধরে চলা তল্লাশি ও নজরদারিতে এসব পরিবহন কোম্পানির অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা যাত্রীদের ফেরত দেয় এবং সংশ্লিষ্ট পরিবহন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে। এই পদক্ষেপ জয়পুরহাটের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক স্বস্তি ও আস্থার জন্ম দিয়েছে।
এই ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, সঠিক কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে যেকোনো অন্যায় প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগ শুধু অর্থ ফেরতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি ছিল এক প্রকার বার্তা- ‘অন্যায় করলে ছাড় নেই’। যাত্রী অধিকার রক্ষায় এটি এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
তবে এই দায়িত্ব কেবল সেনাবাহিনীর নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বেসামরিক কর্তৃপক্ষ—বিআরটিএ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন—তারা কি যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে? যদি তারা সময়মতো সক্রিয় হতো, তাহলে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়তো না।
পরিবহন খাতে স্বেচ্ছাচারিতা এবং নৈরাজ্য বহুদিনের পুরনো সমস্যা। ঈদ এলেই সেটি নতুন রূপে মাথাচাড়া দেয়। এবার সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করায় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এটি যেন সাময়িক স্বস্তি না হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যা নিরসনে নিয়মিত মনিটরিং, ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা প্রকাশ এবং অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এই ঈদে সেনাবাহিনীর সাহসী ও মানবিক ভূমিকায় যেমন আমরা আশার আলো দেখেছি, তেমনি আশা করি—ভবিষ্যতে বেসামরিক প্রশাসনও এভাবে জনস্বার্থে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। কারণ, জনগণের আস্থা তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন রাষ্ট্র তার নাগরিকের পাশে দাঁড়ায়—সাহস ও ন্যায়ের সঙ্গে।
এফপি/রাজ