Dhaka, Sunday | 25 May 2025
         
English Edition
   
Epaper | Sunday | 25 May 2025 | English
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বৈঠক
রাস্তায় নামলে ইউনূস সাহেব ২৪ ঘণ্টাও থাকতে পারবেন না: গয়েশ্বর
ভাঙ্গায় প্রান্তিক পেশাজীবি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
অভিনেতা মুকুল দেব মারা গেছেন
শিরোনাম:

৫৩ বছর বৈঠা হাতে তিতাস নদীর মাঝি মিজান মিয়া

প্রকাশ: রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫, ৪:৪৮ পিএম  (ভিজিটর : ২৪৭)

বয়স হয়ে গেছে, পা গুলি অচল হয়ে গেছে, আমি আর আগের মত নৌকা বাইতে পারি না। চার ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে সংসার। নৌকা চালিয়ে সংসার চলে না বিধায় তিন ছেলেকে আস্তে আস্তে বিদেশ পাঠিয়ে দিছি। দ্বিতীয় ছেলেটা মালদ্বীপ গিয়ে আর খোঁজ খবর নাই, আর আসেও নাই। তার ছেলে-মেয়ে বউও আমার কাঁধে।

প্রতিদিন ফজরের সময় থেকে শুরু হয় আবার রাত হলে ঘরে ফিরি। অনেক লোক বিপদে পড়ে এসে ডাকাডাকি করে রাত্রের বেলা গাং (নদী) পার করে দেওয়ার জন্য।

নদীর বুকে সূর্য ওঠে, আবার রাতের আঁধারে মিলিয়ে যায়। সেই আলো-আঁধারির খেলা যেন প্রতিনিয়ত নতুন করে লিখে জীবন সংগ্রামের গল্প। এমনই এক গল্পের নায়ক মিজান মিয়া।

যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের ভিটি বিশাড়া গ্রামের নিবেদিত প্রাণ এক মাঝি। ৫৩ বছর ধরে তিতাস নদীতে বৈঠা হাতে শুধু নৌকা চালান না, সাথে এগিয়ে নেন জীবনের পথ চলাও।

১৯৭২ সাল থেকে বৈঠা হাতে তিতাস নদীর বুকে ছুটে চলা মিজান মিয়ার রক্তে যেন মিশে আছে এই পেশা। তিনি জানান, এখন অচল হয়ে গেছি বয়স হয়ে গেছে আর নৌকা বাইতে পারি না। গ্রামবাসীকে বললাম আমি আর পারিনা অন্য কাউকে নৌকা চালাতে, এত কষ্ট করে কেউ আর রাজি হয় না। যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখে ততদিন লোক দিয়ে কাজ করায়। দৈনিক ৫০০  থেকে ৮০০ টাকা ইনকাম করে অন্য লোককে কিছু দেই আমি কিছু রাখি।

রোদ, বৃষ্টি, ঝড় প্রকৃতির কোনো প্রতিকূলতাই থামাতে পারেনি তাকে। এই একটানা সংগ্রাম যেনো এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। জীবনের পথচলায় এসেছে নানা বিপর্যয়। স্কুলের ছাত্র- ছাত্রীদের নিয়ে নৌকা ডুবে যাওয়া, যাত্রীদের অবজ্ঞা, সমাজের অবহেলা স্বত্বেও দমে যাননি মিজান মাঝি।

মিজান মিয়া জানান, কোনোদিনও সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের মুখ দেখেননি। যেন নদীর মাঝেই ফেলে রাখা হয়েছে তাঁদের প্রাপ্য অধিকারগুলো, যা আর তীরে এসে পৌঁছায় না।

তার সহকর্মী অহিদ মিয়া বলেন, আমাদের জীবন চলে রৌদ, বৃষ্টি, ঝড় তুফানে। নৌকা চালায়ে যেই টাকা পাই এই টাকা দিয়ে সংসারের বাজার খরচই হয় না। তিনি জানান, বছরের পর বছর নদীতে কাটিয়ে দেওয়ার পরও মাঝিদের সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছু নেই। অর্থাভাবে অনেক সময় সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কাছে নৌকা চালানো শুধু একটি পেশা নয়, এ এক জীবনভর লড়াই।

তবুও তারা থেমে যান না। মুখে কোনো অভিযোগ নেই, কষ্টের কথা চেপে রেখে প্রতিদিন চালিয়ে যান নৌকা। সেই নৌকার সঙ্গে বহন করেন জীবনের ভারও।

নৌকার মাঝি অহিদ মিয়া বলেন, ঝড় তুফানের সময় গাংয়ের (নদী) দু’পাশে বাঁশের খুটি দিয়ে রশির বাধগুলো ছিড়ে যায় তখন কচুরিপানা জন্য নাও (নৌকা) চালাতে পারি না। তখন যাত্রীদেরও হয়রানি আমাদেরও হয়রানি।

অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আয়েশা নুসরাত ভূঁইয়া বলেন, আমরা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ভয়ে আতঙ্কে থাকি; কখন যে নৌকা ডুবে যায়। এখানে একটি ব্রিজ হলে আমাদের কষ্ট লাঘব হয়।

আরেক শিক্ষার্থী নিয়ামুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমরা এই নৌকা দিয়ে পারাপারের সময় অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। ঝড় তুফানের সময় আমাদের স্কুলে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হয়। এখানে একটি ব্রিজ হলে শিক্ষার্থীদের যেমন উপকার হবে জনগণের উপকার হবে।

স্থানীয় জনগণের মতে, মিজান মিয়া একজন পরিশ্রমী লোক। অনেক আগে থেকে দেখে আসছি উনি অনেক কষ্ট করে কচুরিপানার জন্য দুই পাশে বাঁশের খুটি ও রশি দিয়ে বাধ দিয়ে যাত্রী পারাপার করেন। এখানে একটি ব্রিজ হলে শিক্ষার্থী ও জনগণের আর কষ্ট হবে না।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝