পাবনা ও আশপাশের গ্রামীণ জনপদে গোপনে পরিচালিত হচ্ছে এক লাভজনক কৃষি উদ্যোগ—শুকর পালন। খোলাখুলি প্রচার না থাকলেও এই শিল্প এখন শুধু স্থানীয় বাজারেই সীমাবদ্ধ নয়; শুকরের মাংস প্রক্রিয়াজাত করে তা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুললেও এই খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের জীবনমান রয়ে গেছে অবহেলিত।
পাবনা, সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা ও উল্লাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ১০০ থেকে ১৫০ শুকরবিশিষ্ট পাল চোখে পড়ে। এই পশুগুলো সাধারণত খোলা জায়গা, ঝোপঝাড় কিংবা ময়লার ভাগাড়ে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। বছরে দুইবার প্রতিটি শুকর ৫-৬টি শাবকের জন্ম দেয়, ফলে অল্প সময়ে পালগুলো বড় আকার নেয়।
স্থানীয় খামারিদের তথ্য অনুযায়ী, একটি বড় শুকর পাল থেকে বছরে আয় হয় এক থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। তুলনামূলকভাবে রোগব্যাধি কম হওয়ায় পশু চিকিৎসা বাবদ ব্যয়ও সীমিত। অল্প খরচে অধিক লাভের এই হিসাবই খামারিদের উৎসাহিত করছে।
প্রতিটি পালে ৩-৪ জন করে রাখাল কাজ করেন। তারা পথেই ঘুমান, নিজের খাবার নিজেরাই জোগাড় করেন। মালিক পক্ষ দৈনিক খুরাকি বাবদ দেন মাত্র ১০০ টাকা, আর মাসিক বেতন ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কঠোর পরিশ্রম, অনিরাপদ জীবনযাপন ও অপ্রতুল আয়—এই বাস্তবতা তাদের নিত্যসঙ্গী।
শুকর মাংসের স্থানীয় বাজার গড়ে উঠেছে মূলত হরিজন, খ্রিস্টান, চাকমা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে। প্রতিটি শুকরের দাম ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে; গর্ভবতী শুকরের মূল্য আরও বেশি। পর্যাপ্ত ওজন ও বয়স হলে পশুগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্রি হয় এবং একাংশ রপ্তানি বাজারে যায়। প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে পাঠানো মাংস থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে নিয়মিত।
এই শিল্প এখনো পুরোপুরি ব্যক্তিগত উদ্যোগের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সরকার যদি এই খাতে কাঠামোগত সহায়তা দেয়, তাহলে এটি হয়ে উঠতে পারে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারিভাবে খামারগুলোর আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা গেলে বৈদেশিক আয়ে এর ভূমিকা আরও বাড়বে।
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, এই শিল্পের ভিত্তি গড়ে উঠেছে শ্রমিকদের কাঁধে। তাদের বঞ্চিত রেখে উন্নয়ন টেকসই হবে না। উপযুক্ত বেতন, স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসনের নিশ্চয়তা না থাকলে এই সম্ভাবনাময় খাতের ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়বে—এমন আশঙ্কা স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের।
এফপি/রাজ