শ্রীমঙ্গলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পতিত জমিসহ অন্যান্য জমিতে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ধান ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ ও শ্রম কম লাগায় জলবায়ুসহিষ্ণু এ ফসল চাষে চাষিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর বলছে, শ্রীমঙ্গলে ভুট্টা চাষ দেশের অর্থনীতিতেও বিশেষ অবদান রাখবে।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর জানায়, শ্রীমঙ্গলে ভুট্টা চাষে চাষীদের তেমন আগ্রহ ছিল না। এখানকার মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ু ভুট্টা চাষের অনুকুল হওয়ায় এবার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে শ্রীমঙ্গলে ভুট্টা আবাদ করা হয় এবং তা সফলও হয়। এবার শ্রীমঙ্গলে ভুট্টার খুব ভাল ফলন হয়েছে। সম্ভাবনাময় লাভজনক ফসল এই ভুট্টা একটু পরিচর্যা করলেই অন্যান্য ফসলের চেয়ে অনেক লাভবান হওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের মাঝেরগাও গ্রামের ভুট্টা চাষী লাল মিয়া জানান, স্থানীয় কৃষি অফিসের অনুপ্রেরনায় তিনি এবার প্রথমবারের মতো ৯০ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করেন এবং শতভাগ সফলও হন। কৃষি অফিস থেকে তাকে বীজ, সার, কীটনাশক দেয়া হয়। এছাড়াও কৃষি অফিস থেকে তিনি বিনামূল্যে একটি ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র পেয়েছেন।
লাল মিয়া বলেন, ভুট্টা চাষে আমার মোট খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে আমি কিছু বিক্রি করেছি। কিছু ভুট্টা বিক্রির জন্য প্রস্তত করেছি আর কিছু জমিতে আছে। সব মিলিয়ে আমি ১ লাখ টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন প্রায়ই আমার ভুট্টা ক্ষেত দেখতে আসতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান, ভুট্টা চাষ সফল করতে এবার আমরা চাষিদের উদ্ধ্দ্ধু করেছি। ফলে উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। আবহওয়া ভাল থাকায় ভুট্টার ফলন খুব ভাল হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার কোটি টাকার ভুট্টা বিক্রি করবে চাষীরা। লাভজনক ও সম্ভাবনাময় এই ভুট্টা চাষে খরচ ও শ্রম কম হওয়ায় চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবেন।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুমা পাল জানান, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন ‘এ’ থাকে।
সুমা পাল বলেন, ভুট্টার আটা বা ময়দা খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ভুট্টা থেকে খই, কর্নফ্লেক্স প্রভৃতি খাদ্যবস্তু তৈরি করা হয়। ভুট্টার রসালো ডাঁটা ও পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। গৃহপালিত হাঁস, মুরগী, পুকুরের মাছ প্রভৃতির খাদ্যে ভুট্টাচূর্ণ ব্যবহার করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বলেন, শ্রীমঙ্গলে এ বছর ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। সরকারী সহযোগিতা, কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ, ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এই ফসলের আবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে। ধানের তুলনায় ভুট্টা চাষে পানি কম প্রয়োজন এবং উৎপাদন বেশি ও নায্য দাম পাওয়ার কারণে এ অঞ্চলে ভুট্টা চাষ ব্যাপকমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। পতিত জমিতে ভুট্টা চাষের আবাদ বৃদ্ধির কারণে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে না।
এফপি/রাজ