ফরিদপুরের সালথার কুমার নদীতে বৈদ্যুতিক শক ও চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা।
কম সময়ে বেশি মাছ পাওয়ার আশায় এক শ্রেণির জেলে, বৈদ্যুতিক তার যুক্ত বিশেষ ধরনের জালি দিয়ে এই অপকর্ম করছেন। এতে নদীতে থাকা মাছের পোনা, কীটপতঙ্গ, সাপ এবং ব্যাঙ মারা পড়ছে। ফলে কুমার নদ ও বিভিন্ন বিলে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়াসহ জীববৈচিত্র্যে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা বলছেন গভীর রাতে ও দিনে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে ধরা হচ্ছে মাছ। ভোরে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে এ সমস্ত মাছ।
অপরদিকে দেশী মাছের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগের তৈরী অভয়াশ্রমগুলোতে চলছে অবাধে মা মাছ নিধন। এতে করে নিরাপদে ডিম দিয়ে প্রজনন বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ এই সব অভয়াশ্রমগুলোতে অসাধু শিকারিরা নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে মাছ ধরছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশি জাতের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে ৬টি মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরী করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর ৪টি সংস্কার করা হয়েছে। সালথা সদর বাজারের পাশে কুমার নদ থেকে মাঝারদিয়া ইউনিয়নের হরিনা ও খলিশপট্টি এবং রসুলপুর পর্যন্ত এসব অভয়াশ্রম তৈরি করেছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। নির্দিষ্ট এলাকায় অসংখ্য লাল পতাকা দেওয়া হয়েছে। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত নদীর এ অংশটুকু সংরক্ষিত। অথচ অভয়াশ্রমে নির্বিচারে মারা হচ্ছে মা মাছ।
স্থানীয় লোকজন নৌকায় করে অভয়াশ্রমের নির্দিষ্ট এলাকায় অবৈধ চায়না জাল ও বড়শি দিয়ে বোয়াল, রুই, চিতল, কালিবাউশ, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রেড জোন অংশে মাছের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অসংখ্য কঞ্চিসহ বাঁশ পোঁতা হয়েছে। সেখানে ফেলা হয়েছে তেঁতুল গাছের ডাল, যাতে মা মাছ নিরাপদে ডিম দিয়ে প্রজনন বৃদ্ধি করতে পারে। পাশে একটি সাইনবোর্ডও বসানো হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু অসাধু শিকারিরা নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে মাছ ধরছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, সালথার কুমার নদের বিভিন্ন অংশে গভীর রাতে বৈদ্যুতিক সক দিয়ে ধরা হচ্ছে মাছ। এভাবে চলতে থাকলে। আগামীতে মিষ্টি পানির মাছ থাকবে না। ব্যাটারি চালিত ভ্যানের ব্যাটারি কয়েক গুণ শক্তি বৃদ্ধি করে, বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক বোড নিয়ে গভীর রাতে মাছ ধরেন অসাধু কিছু লোক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত অভয়াশ্রমে নৌকায় করে কয়েকজন অভয়াশ্রমে অবৈধ চায়না জাল ও বড়শি ফেলে মাছ ধরছে।
এসময় মৎস্যজীবী গৌরাঙ্গ মালো ও তারাপদ মালো বলেন, অবৈধভাবে মাছ ধরার কারণে গত এক বছরে কুমার নদীতে মাছ উৎপাদন ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে । কিছু মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। তারা নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে। মৎস্য বিভাগ লাখ লাখ টাকা খরচ করে মানুষের জন্য মৎস্য প্রজননের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু লোভী শিকারিরা প্রকাশ্যে কিংবা রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ছিপ ফেলে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এদের রোধ করা যাচ্ছে না।
সালথা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ মো: শাহরিয়ার জামান সাবু বলেন, দুর্বৃত্তরা গভীর রাতে বৈদ্যুতিক সক দিয়ে মাছ ধরার খবর পেয়েছি। বৈদ্যুতিক সক দিয়ে নিধন করা মাছ খাওয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এজন্য পুরো জীববৈচিত্র্যে হুমকির মুখে পড়ছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা কাজ করছি।
এফপি/রাজ