মানব জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্তগুলোর একটি হলো প্রিয়জনের মৃত্যু। সেই শোকের ভার নিয়েই জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বরগুনার বেতাগী উপজেলার পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাইরুল বেপারী। বাবার মৃত্যু উপেক্ষা করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বুধবার ( ২৩ এপ্রিল) বরগুনার বেতাগী উপজেলার পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাবাকে হারিয়ে বুকভরা কষ্ট নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থী খায়রুল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার ভোররাতে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন খাইরুলের বাবা, আমজেদ বেপারী। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ৬৩ বছর বয়সী এই দিনমজুর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। এমন সময় খাইরুলের সামনে দাঁড়িয়ে যায় জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা- এসএসসি। সকালেই ছিল তার ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ের পরীক্ষা।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে খাইরুল সবচেয়ে ছোট। তাদের বাড়ি বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের ভাগলের পাড় গ্রামে। আর্থিক অনটনের মাঝেও খাইরুল নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। বাবার মতো তিনিও দিনমজুরের কাজ করে নিজের শিক্ষার খরচ জোগাতেন। বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবার ভেঙে পড়লেও খাইরুল মন শক্ত করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায়।
পরীক্ষার দিন সকালে বাবার নিথর দেহ ঘরে রেখে খাইরুল উপস্থিত হয় বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। সেখানে ৬ নম্বর কক্ষে বসে পরীক্ষা দেয় খায়রুল। খাইরুলের এমন সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন তার শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসন।
পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান জানান, ‘খবর পেয়ে আমি খাইরুলের বাড়িতে যাই, তাকে সান্ত্বনা দিয়ে সাহস জোগাই। এরপর সে মনোবল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো. বশির গাজী বলেন, ‘খাইরুলের পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশাসন অবগত রয়েছে। যাতে সে বাকি পরীক্ষাগুলোতেও অংশ নিতে পারে এবং মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে, সে বিষয়ে নজর রাখা হবে।’
বুধবার আসরের নামাজের পর আমজেদ বেপারীর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। খাইরুলের আত্মত্যাগ ও অধ্যবসায় দেখে এলাকাবাসী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন।
এফপি/রাজ