দীর্ঘ ১৫ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক, যা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই বৈঠকটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
২০১০ সালের পর এই প্রথমবারের মতো দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবরা সরাসরি বৈঠকে বসছেন। এই বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যেখানে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা এবং অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্য ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের দাবি উত্থাপন করা হবে। এই দাবির মধ্যে রয়েছে ১৯৭০ সালের ভোলার ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রাপ্ত ২০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশি ত্রাণ, যা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আলোচনা হবে, যেখানে বিশেষ করে টেক্সটাইল, কাঁচা তুলা এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি-আমদানির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এছাড়া, সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের বিমান সংস্থা এয়ার সিয়াল আগামী দুই মাসের মধ্যে ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালু করতে পারে।
প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন এবং পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বাংলাদেশে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও স্টাফ কলেজে অংশ নিচ্ছেন।
এই বৈঠকের পর পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এপ্রিলের শেষে বাংলাদেশ সফর করবেন, যা ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর। এই সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হবে।
দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে এই পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে। তবে, ইতিহাসের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান এবং পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সম্পর্ক কতটা টেকসই হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
এফপি/রাজ