কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র এবং বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা মাহমুদ খালিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা যেতে পারে বলে রায় ঘোষণা করেছেন একজন মার্কিন অভিবাসন বিচারক লুইজিয়ানায়। কারণ, তার ফিলিস্তিনপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাকস্বাধীনতা, আইনি প্রক্রিয়া এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ক্যাম্পাসে ভিন্নমত দমন নীতির বিরুদ্ধে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া ফিলিস্তিনি মাহমুদ খালিলকে ৮ মার্চ ২০২৫ নিউ ইয়র্ক সিটির তার অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)। তিনি তখন তার গর্ভবতী মার্কিন নাগরিক স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করছিলেন। কোনো অপরাধে অভিযুক্ত না হলেও, সরকার ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের একটি ধারা ব্যবহার করে দাবি করেছে যে, খালিলের উপস্থিতি আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্ষতিকর।
ইমিগ্রেশন বিচারক জেমি কোম্যানস রায় দিয়েছেন যে, সরকারের যুক্তি ‘প্রাথমিকভাবে গ্রহণযোগ্য’, ফলে ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া যাবে। খালিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে আপিল করার জন্য। তারা যুক্তি দিচ্ছেন যে, খালিলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত এবং সরকারের অভিযোগে কোনো অপরাধের প্রমাণ নেই। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) এই রায়কে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে সমালোচনা করেছে, যা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি চিঠির উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে।
খালিলের মামলা ট্রাম্প প্রশাসনের একটি বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ, যা কলেজ ক্যাম্পাসে বর্ধিত ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবেলার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ ১৪১৮৮ স্বাক্ষর করেন, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। এর ফলে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল হারায়, কারণ তারা ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
খালিলের আইনজীবীরা দাবি করছেন যে, তার গ্রেপ্তার ও ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করছে। তারা নিউ জার্সিতে একটি ফেডারেল মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে তার গ্রেপ্তারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার আবেদন জানানো হয়েছে। খালিল আদালতে বলেন, ‘আজকের রায়ে আমরা স্পষ্টভাবে দেখেছি যে, ন্যায়বিচার ও আইনি প্রক্রিয়া অনুপস্থিত ছিল।’
খালিলের মামলা এখন জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার একে অপরের মুখোমুখি। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে, এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মতের ভিত্তিতে ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে। খালিলের আপিলের ফলাফল বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত বিদেশি নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে খালিল লুইজিয়ানায় আটক রয়েছেন, যেখানে তিনি তার আইনি লড়াইয়ের পরবর্তী ধাপের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই মামলা জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং সংবিধানিক অধিকার ও নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
এফপি/রাজ