বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা নতুন কিছু নয়, তবে সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়ায় যা ঘটেছে- তা স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাঁথিয়া পৌরসভায় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা স্থানীয় হাটবাজারের দরপত্র নিয়ন্ত্রণের নামে সন্ত্রাসী কায়দায় প্রতিপক্ষকে দমন করার পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও আক্রমণ করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাঁথিয়া পৌরসভার বোয়াইলমারী হাটবাজারের দরপত্র ক্রয়কে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত সমর্থিত একটি চক্র বিএনপি সমর্থকদের দরপত্র কিনতে বাধা দিচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিকরাও খবর সংগ্রহ করতে সেখানে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জামায়াতের সমর্থকরা উপস্থিত সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং একপর্যায়ে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার সাঁথিয়া উপজেলা প্রতিনিধি খালেকুজ্জামান পান্নুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। অন্যান্য সাংবাদিকরাও তীব্র হুমকির মুখে পড়েন। লাঞ্চিত অন্যান্য সাংবাদিকরা হলো চ্যানেল এস এর সাংবাদিক এমজে সুলভ, আনন্দ টিভির সাংবাদিক মনোয়ার পারভেজ মানিক, যায়যায় দিনের সাংবাদিক ফারুক হোসেন, দৈনিক নিরপেক্ষ এর তোফাজ্জল হোসেনসহ কয়েকজন সাংবাদিক।
অভিযোগ রয়েছে, মোমিন, রতন, হেলাল, সাদ্দাম, মাসুদসহ জামায়াতে ইসলামীর ১৫-২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল এই হামলা চালায়।
এতে বিএনপি তাতী দলের নেতা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সহ কয়েকজন টেন্ডার জমা দিতে গেলে তাদেরকেও মেরে পোশাক ছিড়ে লাঞ্চিত করে বের করে দেয়া হয়।
হামলার পর সাংবাদিকরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতার ইঙ্গিত দেয় বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
হামলায় আহত সাংবাদিকরা বলেন- এই হামলা কেবল একজন সাংবাদিকের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। স্বাধীন সাংবাদিকতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। জামায়াতের মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে যদি এই স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে তা পুরো সমাজের জন্যই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
১. অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি: প্রশাসনকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: স্থানীয় প্রশাসনকে সংবাদকর্মীদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. গণমাধ্যমের সোচ্চার ভূমিকা: সাংবাদিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজকে এই হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে।
সাংবাদিকরা আরও বলেন- সাঁথিয়ার এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করলো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের এখনই প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো গোষ্ঠী এভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর সাহস না পায়।
এফপি/এমআই