গতকাল রাতে ইনকিলাব মঞ্চ তাদের ফেসবুক পেজে পোস্টের মাধ্যমে এ খবর নিশ্চিত করে। রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’
এর আগে ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তারপর ওসমান হাদিকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানেই তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ। তারা খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে হাদিকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে অবতরণের প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে নিরাপদে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।
এদিকে, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ নামে একজনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁর সহযোগী আলমগীর শেখ মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও র্যাব। এ দুজন অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কয়েক সূত্র জানিয়েছেন। ঘাতকদের ধরতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু তার আগেই ঘাতক নির্বিঘ্নে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানান বিভিন্ন সূত্র।
এ ছাড়া ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। তাঁদের মধ্যে ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা মোসা. হাসি বেগম (৬০), স্ত্রী সাহেদা পারভিন সামিয়া ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু রয়েছেন।
এর আগে বুধবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হাদিকে দেখতে যান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। পরে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে হাদির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান, তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে পোস্ট করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াসহ আরও অনেকে। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দীন নাসির তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘তরুণ নেতা শরীফ ওসমান হাদি এক অবিচল সাহসের নাম। দেশপ্রেমের প্রশ্নে অটল, যার প্রতিরোধ কখনো আপস করেনি। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শুধু রাজ পথে লড়েছেন এমন নয়; বরং আরও তাৎপর্যপূর্ণভাবে লড়েছেন সংস্কৃতির ময়দানে। শিল্প, সাহিত্য ও বিবেকের সংমিশ্রণে স্বৈরাচারের শিকড়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।’
ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।