শীত নেমে এসেছে নিঃশব্দে। ভোরে হালকা কুয়াশার চাদর আর সন্ধ্যার ঠান্ডা বাতাস জানিয়ে দিচ্ছে, শীত এবার পুরোপুরি দরজায় কড়া নাড়ছে। আর এই শীতের আগমনী বার্তা সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে ধরা পড়ছে চট্টগ্রামের ব্যস্ত বাজারগুলোতে। শহরের নিউ মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন, আফমি প্লাজা, জাম্বুরি পার্ক মার্কেট থেকে শুরু করে জিইসি মোড়, বহাদ্দরহাট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদের ফুটপাত সব জায়গাতেই সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা জমে উঠছে শীতের পোশাক কেনাকাটার রঙিন উৎসব।
বাজারে ঢুকলেই চোখে পড়ে সারি সারি হুডি, বোম্বার জ্যাকেট, কোট, কার্ডিগান, সোয়েটার আর শাল। দোকানগুলোর সামনে লেগেই থাকে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ নিজের জন্য কিনছেন, কেউ পরিবারের সদস্যদের জন্য। অনেকেই ঠান্ডা পুরোপুরি নামার আগেই পছন্দের পোশাক তুলে নিচ্ছেন যাতে পরে ডিজাইন বা সাইজ নিয়ে ঝামেলায় না পড়তে হয়।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিক্রেতা হাসান মাহমুদের মুখে তৃপ্তির হাসি। তিনি বলেন, “গতবারের চেয়ে এ বছর শীতের পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। শীত শুরু হতেই যেন বাজার জমে উঠেছে। সকালে দোকান খোলার পর থেকেই ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে।” তার দোকানের সামনে দাঁড়ালেই দেখা যায়, হুডি আর কাট-সোয়েটার হাতে নিয়ে তরুণ ক্রেতাদের আগ্রহ মেটাতে তার বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে।
জাম্বুরি পার্ক মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, “এবার হুডির ডিজাইনগুলো খুব ট্রেন্ডি। আগে এলে ভালো কালার পাওয়া যায়। তাই এখনই কেনাকাটা সারছি। তার হাতে তিনটি ভিন্ন রঙের হুডি, আর চোখেমুখে স্পষ্ট শীতকে স্বাগত জানানোর আনন্দ।”
নিউ মার্কেটে দেখা মিলল গৃহিণী সালমা আক্তারের। পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের পোশাক বেছে নিচ্ছিলেন তিনি। “ব্র্যান্ডেড দোকানে দাম একটু বেশি, কিন্তু ফুটপাতেও ভালো মানের সোয়েটার পাওয়া যায়। তাই দু'জায়গা থেকেই নিচ্ছি, যা প্রয়োজন সেটাই কিনছি,” বললেন তিনি হাসিমুখে।
শুধু বড় দোকানই নয়, চট্টগ্রামের ফুটপাতের ব্যবসাও জমে উঠেছে। আন্দরকিল্লা, গোলপাহাড় মোড়, জিইসি মোড় সব জায়গার ফুটপাত যেন এখন একেকটা ছোট শীতের মেলা। বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, “সন্ধ্যার পর এমন ভিড় হয় যে দাঁড়ানো যায় না। শীত বাড়লে আমাদের ব্যবসাও জমে যায়। দাম কম বলে ক্রেতারাও খুশি থাকে। ফুটপাতের দোকানে ক্রেতাদের হাসি আর দরদামের শব্দে যেন এক আলাদা উৎসবের ছোঁয়া মেলে।”
অন্যদিকে চট্টগ্রামের অনলাইন মার্কেটও কম ব্যস্ত নয়। ই-কমার্স পেজ ও ফেসবুক লাইভে একের পর এক অফার, ডিস্কাউন্ট আর নতুন কালেকশন যুক্ত হচ্ছে। অনলাইন ক্রেতা ইমরান কবির বলেন, “সময় পাই না বাইরে যেতে। তাই অনলাইন থেকে কিনি। এখন দ্রুত ডেলিভারি আর ভালো মানের পোশাক দুটোই পাচ্ছি।”
বিক্রেতাদের ভাষায়, শীত যত বাড়বে, এই ভিড় আরও বাড়বে। ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়টাকে তারা সবচেয়ে বেশি বিক্রির মৌসুম হিসেবে দেখছেন। তাই এখন থেকেই মার্কেটজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে আলো আর স্টক।
সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে শীতের আগমন যেন এক আনন্দমুখর ব্যবসায়িক মৌসুমের সূচনা করেছে। মানুষের মুখে হাসি, দোকানির ব্যস্ততা এবং বাজারজুড়ে রঙিন পোশাকের সমারোহ—সব মিলিয়ে শীতের আবহ এখন শহরকে সাজিয়ে তুলেছে উৎসবের মতো। শীত নেমে এসেছে—আর তার সজীব স্পর্শ এখন চট্টগ্রামবাসীর জীবনে নতুন উচ্ছ্বাস এনে দিয়েছে।
এফপি/অ