Dhaka, Wednesday | 3 December 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 3 December 2025 | English
উত্তরাঞ্চল শৈত্যপ্রবাহ আসছে, বাড়ছে শীতজনিত রোগ
আবারও কমল সোনার দাম
ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিনের দাম লিটারে বাড়ল ৯ টাকা, খোলা তেল ৫ টাকা
ঢাকায় তাপমাত্রা নামল ১৭ ডিগ্রিতে
শিরোনাম:

আইন মেনে কথা বলবেন, পান্নাকে ট্রাইব্যুনালের সতর্কবার্তা

প্রকাশ: বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৮:৫৮ পিএম  (ভিজিটর : ২২)

ঠিকঠাক সময়ে এজলাসে হাজির আইনজীবীরা। আসামিদেরও তোলা হয় কাঠগড়ায়। গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় সাংবাদিকরাও করছেন অপেক্ষা। শুরু হয়ে যায় শুনানি। কিন্তু এর মধ্যেই রাষ্ট্রের খরচে নিয়োগ পাওয়া এক আইনজীবীর অনুপস্থিতি নজরে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। তাও আবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হয়ে স্বেচ্চায় লড়তে চাওয়া অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। ঠিক তখনই জরুরি তলব করা হয় তাকে। আর ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি ট্রাইব্যুনালে হাজির হন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।

র‌্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন তথা টিএফআই সেলে গুমের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি ছিল আজ। এদিন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এজলাসকক্ষে আসেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। প্রথমে অন্য দুই মামলার শুনানি হয়। এরপর গুমের এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি শুরু করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

শুনানিতে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের নৃশংস বর্ণনা তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। বিরোধী মতাদর্শের লোকদের কীভাবে গুম করা হতো, কোথায় নিয়ে যাওয়া হতো; সব তথ্য সামনে আনেন তিনি। মিনিট দশেক পরই তাজুল ইসলামকে থামিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর কথা জানতে চান ট্রাইব্যুনাল।

চিফ প্রসিকিউটরের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা কি স্টেট ডিফেন্স দিয়েছি।’ তখন তাজুল ইসলাম বলেন, ‘একজন স্বপ্রণোদিত হয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হওয়ার আবেদন করেছেন। পরে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু তিনি চিঠি পাঠিয়ে এ মামলায় না লড়ার কথা জানিয়েছেন।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘তিনি আগ্রহী না অনাগ্রহী তা ট্রাইব্যুনালে এসে জানাতে হবে। তাকে অফিসিয়ালি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আজ আসেননি কেন।’

এ সময় চিঠি দেখতে চান ট্রাইব্যুনাল। পরে চিঠি দেখে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন ‘আইন-টাইন জানে না কিছু।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জানি না। ওনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেছেন। তবে অন্যজনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রার্থনা করি আমরা।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘যেহেতু এক নম্বর আসামির (শেখ হাসিনা) আইনজীবী নেই। সেহেতু আমরা আগে তার বক্তব্য শুনবো।’

এরপর আবারও শুনানি চালিয়ে যান তাজুল ইসলাম। ক্ষমতায় টিকে থাকতে গুমের পথ বেছে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে এক বাহিনীর সদস্যরা আটক করে তুলে দিতেন আরেক বাহিনীর কাছে। এছাড়া জেআইসি সেল তথা আয়নাঘরকে আর্ট গ্যালারি হিসেবে উপাধি দেওয়া হয় বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর। এই নামকরণের পেছনের কাহিনিও ব্যাখ্যা করেন তিনি। অর্থাৎ এখানে সবচেয়ে দামি বন্দিদের ডাকা হতো মোনালিসা নামে। একইসঙ্গে বন্দিদের আলাদা আলাদা নাম ছিল। এজন্যই আর্ট গ্যালারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ সময় গুম নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কিছু মন্তব্য সামনে আনেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই প্রধান কৌঁসুলি। এর মধ্যেই তাকে ফের থামিয়ে দেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘পান্না সাহেবকে ফোনে পাওয়া যায় কিনা দেখেন তো। ফোন করে এখনই আসতে বলেন। নয়তো লোকজন পাঠাক।’

ফের শুরু হয় শুনানি। গুমের সঙ্গে কোন কোন বাহিনী জড়িত তাদেরও ব্যাখ্যা দেন চিফ প্রসিকিউটর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান হলো পুলিশ। এই বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত। তাদেরই আরেকটি বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব। আর এ র‌্যাবের কারণেই এই সেনা কর্মকর্তারা আজ অভিযুক্ত। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ রয়েছে। একটি ডেথ স্কোয়াডে পরিণত হয়েছিল র‌্যাব। বিরোধী মতাদর্শের লোকদের বিচারবহির্ভূত আটক, বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হতো। র‌্যাবেরও প্রতিটি ব্যাটালিয়নে বন্দিশালা ছিল। র‌্যাব-১ এ ছিল টিএফআই সেল। যা আয়নাঘর নামেও পরিচিতি পায়। এখানে ২৯টি সেল ছিল। ভিআইপি বন্দিদের জন্য ছিল দুটি বড় কক্ষ। জিজ্ঞাসাবাদের নামে কাটা হতো হাত। চোখ উপড়ে ফেলা হতো। আবার এসবের ছবি তুলে দেয়ালে টানানো হতো।

এর মধ্যেই ১২টা ৩৩ মিনিটে হুইলচেয়ারে করে এজলাসকক্ষে ঢোকেন জেডআই খান পান্না। তার সঙ্গে জুনিয়র আইনজীবীরাও ছিলেন। ঢুকতেই তার শারীরিক খোঁজখবর নেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান।

ট্রাইব্যুনাল : আপনি সুস্থ আছেন?

পান্না : না।

ট্রাইব্যুনাল : আপনি (শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে) নিয়োগ পেয়েছেন।

পান্না : না।

ট্রাইব্যুনাল : এখানেই তো ছিলেন ওই দিন।

পান্না : আদেশগতভাবে পেয়েছি।

ট্রাইব্যুনাল : চিঠি পেয়েছেন?

পান্না : না।

ট্রাইব্যুনাল : দেট ইজ দ্য অর্ডার ট্রাইব্যুনাল।

পান্না : আমি ফিজিক্যালি আনফিট। চিঠি দেওয়ায় আজ আসিনি।

ট্রাইব্যুনাল : আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি হয় না। তবু হয়েছে। আবার হবে। আপনি না পারলে আদালতে প্রতিনিধি পাঠাতেন। আপনার মতো সিনিয়র আইনজীবী দু-তিনজন আছেন। আসামিও আসবে না। আইনজীবী নিয়োগ দিলে সমালোচনা হবে। আমরা কী করবো। একইসঙ্গে ভিডিও বার্তায় দেওয়া পান্নার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এটা কি আপনি বলতে পারেন। আপনি বলেছেন যে আপনার ক্লায়েন্ট (শেখ হাসিনা) এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। এজন্য আপনিও মানেন না। আপনি নিজেই আইনজীবী হওয়ার আবেদন করেছেন।

জবাবে পান্না বলেন, আমি আনকন্ডিশনালি অ্যাপোলজি চাই।

একপর্যায়ে ফের তার কাছে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে লড়ার কথা জানতে চাওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে কি আপনি করবেন না। জবাবে না সম্বোধন করেন পান্না। তখন তার কাছে সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা করে অন্য কাকে নিয়োগ দেওয়া যায়; সেজন্য মতামত চাওয়া হয়। তখনও না জবাব দেন শেখ হাসিনরা হয়ে লড়তে চাওয়া এই আইনজীবী। পরে আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় আমির হোসেনের আপত্তি আছে কিনা জানতে চান চেয়ারম্যান।

ট্রাইব্যুনাল ফিট মনে করলে নিয়োগে নিজের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান দেন আমির হোসেন। তিনি জুলাই গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার আরেক মামলায়ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। এ মামলায় এরই মধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীসহ আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সাজা পেয়েছেন।

গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে নতুন আইনজীবী নিয়োগের পরই পান্নার ইস্যু ফের সামনে আনেন চিফ প্রসিকিউটর। ভিডিও বার্তায় যেসব কথা বলেছেন; তা আদালত অবমাননার শামিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তখন পান্নার উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আপনাকে আইডল ভাবি। আপনার কাছ থেকে অনেক শিখেছি। অথচ আপনি বলেছেন যে শেখ হাসিনা এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। এজন্য আপনিও মানবেন না। তাহলে কি ধরে নেবো আপনার সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হয়। এই আদালত থেকে কি আপনার ক্লায়েন্ট বড়।

এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, আপনি বিচার-বিচারক নিয়ে সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আইন মানেন না এ কথা বলতে পারেন না। তাহলে আপনি যে আইন মানেন, সেটা কোন দেশের। কারণ এই আইন তো সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। এটা ৯০ বা ২৪’-এর নয়, ৭২’-এরই সংবিধান। এছাড়া রাজনৈতিক নেতারা যা ইচ্ছে তা-ই বলতে পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আইনজীবীদের আইনানুযায়ী কথা বলতে হবে। অতএব ভবিষ্যতে আইন মেনে কথা বলবেন। বিভ্রান্তি করা উচিত নয়।

গত ২৩ নভেম্বর অভিযুক্ত শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হওয়ার জন্য আবেদন করেন জেড আই খান পান্না। পরে তাকে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আজ নির্ধারিত শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আসেননি এই আইনজীবী। এজন্যই তাকে ফোনে ডেকে আনা হয়। আর ফোন পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তাৎক্ষণিক হাজির হন তিনি।

টিএফআই সেলে গুমের এ মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হলেও গ্রেপ্তার রয়েছেন ১০ সেনা কর্মকর্তা। তারা হলেন- র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

পলাতকরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র‌্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাতদিনের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন আদালত। ৮ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, প্রথমবার আমি শেখ হাসিনার মামলায় লড়তে চেয়েছিলাম। হাসপাতালে থাকার কারণে ওই সময় আমার এক সহকর্মীকে পাঠিয়েছি। কিন্তু নিয়োগ হয়ে যাওয়ায় আর সুযোগ পাইনি। এজন্য গুমের দুই মামলায় স্বেচ্ছায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর হয়ে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হওয়ার আবেদন করি। ট্রাইব্যুনালের নিয়োগে আমিও রাজি হই। তবে শারীরিক অসুস্থতা থাকায় তা প্রত্যাহার করেছি।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝