বাংলাদেশের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই মতামত উঠে আসে কারিতাস খুলনা অঞ্চল আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে।
“জলবায়ুজনিত অভিবাসী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় একীভূতকরণ” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকটি আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) খুলনা প্রেস ক্লাবের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। এতে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংস্থা এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) ০৯, ২১, ২২ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল নীতি ও মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধান দূর করা এবং জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা।
কারিতাস খুলনা অঞ্চলের প্রোগ্রাম অফিসার (ডিএম) ড. সুমন কুমার মালাকার বৈঠকের উদ্দেশ্য তুলে ধরে অধিবেশন শুরু করেন।
স্বাগত বক্তব্যে দেন মি. অ্লবিনো নাথ, আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস খুলনা অঞ্চল, দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কার্যক্রমে কারিতাসের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “সহনশীলতা বৃদ্ধি ও কাউকে পিছিয়ে না রাখতে হলে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে একীভূতভাবে বিবেচনা করতে হবে।”
খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো পুনরাবৃত্তিমূলক দুর্যোগের শিকার। এসব বিপর্যয় হাজার হাজার মানুষকে নগর বস্তিতে পাড়ি দিতে বাধ্য করছে, যেখানে তারা নতুন আর্থ—সামাজিক সংকটে পড়ছে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাব ও অনিরাপদ বাসস্থানের কারণে সামাজিক সুরক্ষার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ শাহ। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি এখন একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। এই জনগোষ্ঠীকে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে পারি।” তিনি আরও বলেন, “কারিতাসের মতো মাঠভিত্তিক সংস্থার গবেষণা ও সুপারিশ ভবিষ্যতের নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব শরীফ আসিফ রহমান। তিনি বলেন, “খুলনা সিটি কর্পোরেশন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসীদের দুরবস্থা গভীরভাবে উপলব্ধি করে। আমরা নগর পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার কার্যক্রমে এই জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছি। কারিতাসের মতো সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করলে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল নগর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।”
কুয়েটের ইনস্টিটিউট অফ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যেখানে তিনি তিনটি উপকূলীয় উপজেলার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বর্তমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো মূলত স্থায়ী জনগোষ্ঠীর জন্য পরিকল্পিত এবং এগুলো ভ্রাম্যমাণ বা বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর বিশেষ চাহিদা মেটাতে অপ্রতুল। তারা উদ্ভাবনী, অভিঘাত—সহনশীল এবং নীতিগতভাবে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সভা শেষে মি. আলবিনো নাথ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আজকের আলোচনায় উত্থাপিত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জন্য একটি স্পষ্ট অংশীজন রোডম্যাপ প্রণয়নের ওপর জোর দেন।
এফপি/এমআই