কিশমিশ, অর্থাৎ শুকনো আঙুর এই ফলটি যেমন মিষ্টি, তেমনি গুণেও ভরপুর। আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরা কিশমিশ শুধু শক্তির জোগানই দেয় না, বরং শরীরের নানা জটিল সমস্যা দূর করতেও দারুণ কার্যকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশমিশ শুকনো খাওয়ার চেয়ে ভিজিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ আরও অনেক বেশি বাড়ে। ভেজানোর ফলে কিশমিশের ভেতরের ভিটামিন ও মিনারেল শরীরে দ্রুত শোষিত হয়, হজম সহজ হয় এবং শরীরের নানা অঙ্গের কার্যকারিতা উন্নত হয়।
আয়ুর্বেদ থেকে আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান, সবখানেই ভেজানো কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাসকে ‘প্রাকৃতিক ওষুধ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পুষ্টিবিদদের দাবি, কেউ যদি টানা এক মাস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৮-১০টি ভেজানো কিশমিশ খান, তাহলে শরীরে দেখা দেবে একের পর এক ইতিবাচক পরিবর্তন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কী কী পরিবর্তন আসবে—
ভেজানো কিশমিশ কেন শুকনো কিশমিশের চেয়ে ভালো
শুকনো কিশমিশে প্রাকৃতিক চিনি ও ফাইবারের ঘনত্ব বেশি থাকে, যা কখনও কখনও হজমে সমস্যা করতে পারে। কিন্তু পানি ভিজিয়ে রাখলে কিশমিশ নরম হয়, প্রাকৃতিক চিনি কমে আসে এবং এর ভেতরের পুষ্টি উপাদান সহজে শরীরে মিশে যায়। ফলে হজমের চাপ কমে ও পুষ্টি শোষণ বেড়ে যায়।
১. হজম ক্ষমতার উন্নতি
কিশমিশে থাকা ফাইবার শরীরের প্রাকৃতিক রেচক হিসেবে কাজ করে। সকালে ভেজানো কিশমিশ খেলে হজম দ্রুত হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং পেটের সমস্যা দূর হয়।
এক মাসের ফল : নিয়মিত খেলে অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক থাকে, পেট হালকা লাগে ও হজম শক্তি বেড়ে যায়।
২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
কিশমিশ হলো পটাশিয়ামের দারুণ উৎস, যা রক্তনালীকে শিথিল করে ও সোডিয়ামের প্রভাব কমিয়ে দেয়। এক মাসের ফল : উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে, হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে এবং সারাদিন শরীর থাকে স্বস্তিতে।
৩. রক্তস্বল্পতা দূর করে
আয়রন ও বি-কমপ্লেক্স ভিটামিনসমৃদ্ধ কিশমিশ রক্তে লোহিত কণিকা বাড়ায় ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উন্নত করে। এক মাসের ফল : রক্তস্বল্পতা দূর হয়, দুর্বলতা কমে এবং শরীরে শক্তি ফিরে আসে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভেজানো কিশমিশে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এক মাসের ফল : সর্দি-কাশির মতো সাধারণ সংক্রমণ কম হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৫. ত্বক উজ্জ্বল করে ও লিভার পরিষ্কার রাখে
কিশমিশ রক্ত পরিশোধনে সহায়ক, যা ত্বক ও লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এক মাসের ফল : ত্বক হয় উজ্জ্বল ও দাগহীন, লিভার ডিটক্স হয়, বলিরেখা কমে এবং মুখে আসে প্রাকৃতিক জেল্লা।
৬. প্রাকৃতিক শক্তি যোগায় ও অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে
সকালে ভেজানো কিশমিশ খেলে সারাদিন থাকে প্রাণশক্তি। এতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এক মাসের ফল : ক্লান্তি কমে, পেশির টান দূর হয় এবং মানসিক সতেজতা বাড়ে।
ভেজানোর পদ্ধতি
রাতে ঘুমানোর আগে ৮-১০টি কিশমিশ একটি পরিষ্কার গ্লাসে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে কিশমিশগুলো চিবিয়ে খান এবং সেই ভেজানো পানিটিও পান করুন।
সতর্কতা : ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন-সংবেদনশীল ব্যক্তিরা নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
এফপি/এমআই