যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সরকার আজ আনুষ্ঠানিকভাবে “জলবায়ু ও হাইড্রোমেটিওরোলজিক্যাল সেবার উন্নয়নের মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধি (EnRICH)” প্রকল্প উদ্বোধন করেছে। অনূষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় এর উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন (BHC) এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (BWDB)-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে এই যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ হাইড্রোলজিক্যাল ও মেটিওরোলজিক্যাল সহযোগিতা শুরু হয়।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় (MoEFCC) ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় (MoWR)-এর পক্ষ থেকে UK-বাংলাদেশ হাইড্রোমেট সহযোগিতা এবং NABAPALLAB প্রকল্প সম্প্রসারণের উদ্বোধনকালে বলেন, “আজ আমরা ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করছি—উন্নত পূর্বাভাস এবং উন্নত সুরক্ষার মাধ্যমে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই যুগল উদ্যোগ প্রকৃতি-ভিত্তিক অভিযোজন ও উন্নত পূর্বাভাসকে একত্রিত করে বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা শক্তিশালী করবে। মাননীয় উপদেষ্টা FCDO-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় EnRICH প্রকল্পে সহায়তার জন্য প্রশংসা জানান।
ঢাকার পানি ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের এক যৌথ অনুষ্ঠানে এই প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। এটি যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ জলবায়ু ও পরিবেশ কর্মসূচি (BCEP)-এর অংশ, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো সময়োপযোগী, নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক পূর্বাভাসের মাধ্যমে চরম আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত ঝুঁকির প্রতি বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা জোরদার করা।
প্রকল্পের বিবরণ:
• সময়কাল: সেপ্টেম্বর ২০২৫ – মার্চ ২০২৬
• অর্থায়ন: যুক্তরাজ্য সরকার (UK International Development)
• বাস্তবায়ন: BWDB ও BHC, ঢাকা
• কারিগরি সহায়তা: ইউকে মেট অফিস (UKMO) ও রিজিওনাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি-হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (RIMES)
• ভৌগোলিক লক্ষ্য এলাকা: সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা ও ফেনী জেলার হঠাৎ বন্যা প্রবণ অঞ্চলসমূহ
বাংলাদেশের নিম্নভূমি ও বদ্বীপভিত্তিক ভূপ্রকৃতি একে বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশে পরিণত করেছে। ২০২৪ সালের পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা, যা অবকাঠামো ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি করেছিল, একটি শক্তিশালী পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানে হেনরি থম্পসন, ইউকে মেট অফিসের WISER(Weather and Climate Information Services) এশিয়া প্যাসিফিক প্রোগ্রাম ম্যানেজার, WISER(Weather and Climate Information Services) প্রোগ্রামের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। বিল লিথেস, ইউকে ফ্লাড ফোরকাস্টিং সেন্টারের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট ম্যানেজার, যুক্তরাজ্যের বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থার বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন, যার মধ্যে Flood Guidance Statement ও Rapid Flood Guidance উল্লেখযোগ্য।
মো. রাইহানুল হক খান, বাংলাদেশে RIMES-এর কান্ট্রি প্রোগ্রাম লিড, প্রকল্পের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এবং বলেন, এই সহযোগিতা জাতীয় মালিকানা, কমিউনিটি পর্যায়ে উপকার এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিশ্চিত করবে।
EnRICH প্রকল্পটি বাংলাদেশের ইমপ্যাক্ট-বেইজড ফোরকাস্টিং (IBF) বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করে এবং জলবায়ুজনিত দুর্যোগের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। এটি জাতীয় নীতিমালা ও টেকসই উন্নয়ন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বৃহত্তর লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্পটি CARE বাংলাদেশ ও অংশীদারদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত NABAPALLAB প্রকল্পসহ যুক্তরাজ্য-সমর্থিত অন্যান্য উদ্যোগের পরিপূরক হিসেবেও কাজ করবে।
যৌথ জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রকল্প দুটির অবদান তুলে ধরা হয়—পরিবেশগত ও প্রযুক্তিগত উভয় দিক থেকেই—যা দেশের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে সহনশীলতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
এই অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় (MoWR), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় (MoEFCC), উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, একাডেমিয়া, নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
মো. রফিউস সাজ্জাদ, পিইঞ্জ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা), BWDB, UK-বাংলাদেশ হাইড্রোমেট সেবার সহযোগিতাকে একটি মাইলফলক উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা স্থানীয় পর্যায়ে বন্যা পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কতা ব্যবস্থাকে উন্নত করবে। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে UK Met Office-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে উন্নত পূর্বাভাস প্রযুক্তি হস্তান্তর, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতের বন্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সহনশীলতা জোরদার করা সম্ভব হবে। আমরা UK Met Office-এর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। এটি বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানে একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং ইউরোপের অন্যতম সেরা পূর্বাভাস মডেল ও উচ্চ রেজোলিউশন তথ্য সরবরাহকারী।”
মি. জেমস গোল্ডম্যান, ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ও উপ-হাইকমিশনার, ব্রিটিশ হাইকমিশন, ঢাকা, তার বক্তব্যে জলবায়ু সহনশীলতা ও দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের এই অংশীদারিত্বে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—জলবায়ু সহনশীলতা জোরদার করা, প্রাকৃতিক প্রতিবেশ রক্ষা করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়া। আজকের কাজটি মূলত অংশীদারিত্বের, এটি জ্ঞান ও দক্ষতা ভাগাভাগির, এবং একসাথে কাজ করার একটি সুযোগ।”
এফপি/এমআই