চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক থেকে একের পর এক নাটবল্টু উধাও হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সাম্প্রতিক এক তদন্তে এই চুরির প্রমাণ মিলেছে। এতে নগরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই উড়ালসড়কের কাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ। তদন্তে জানা গেছে, এই ঘটনায় জড়িত ভাসমান মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা।
মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উড়ালসড়কটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হয় এবং ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এটি চসিকের কাছে হস্তান্তর করে। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে জিইসি অংশের স্টিল গার্ডার থেকে নাটবল্টু হারানোর অভিযোগ ওঠার পর চসিক আগস্টে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যেখানে সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশন প্রকৌশলীরাও ছিলেন।
তদন্তে দেখা যায়, জিইসি থেকে বায়েজিদমুখী র্যাম্পে স্টিল গার্ডারের ১৪০টি নাটবল্টু ও ৫৩টি ওয়াশার নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'নাটবল্টুগুলো মাদকাসক্তদের দ্বারা চুরি হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।'
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উড়ালসড়কের উচ্চতা ও কাঠামোগত জটিলতার কারণে এর নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম কখনো সঠিকভাবে হয়নি। প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন ক্রেন বা ম্যান-লিফট এবং প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় ঝুঁকি ধীরে ধীরে বাড়ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, উড়ালসড়কের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে দক্ষ কারিগরি জনবল গড়ে তোলা, আধুনিক সরঞ্জাম কেনা এবং প্রয়োজনীয় নাটবল্টু মজুত রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যাতে হঠাৎ কোনো ঢিলা অংশ বা ত্রুটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামত করা যায়।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে চুরি হওয়া স্থানে নতুন নাটবল্টু স্থাপন এবং প্রবেশ ঠেকাতে কিছু অংশে কাঁটাতার বসানো হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির সব সুপারিশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিফাতুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, “উড়ালসড়কের মতো উঁচু স্থাপনা থেকে নাটবল্টু চুরি হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক। যে উচ্চতায় এই অংশগুলো রয়েছে, সেখানে সাধারণভাবে কেউ পৌঁছাতে পারে না। তবু কিছু মাদকাসক্ত ব্যক্তি এই চুরি করতে পেরেছে—এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বড় ক্ষতি না হলেও ভবিষ্যতে এই ধরনের চুরি পুরো কাঠামোর ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ঝুঁকি বাড়বে।”
চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম ব্যস্ত এই উড়ালসড়ক প্রতিদিন হাজারো যানবাহনের চলাচলের প্রধান পথ। কাঠামোগত কোনো দুর্বলতা বা অবহেলা নগরের বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে—এমন আশঙ্কা এখন প্রকৌশলী থেকে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সবার মনে ভর করেছে।
এফপি/অআ